
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
স্মার্টকার্ড জটিলতায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পাঁচ মাস ধরে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য পায়নি উপজেলার ১৭ হাজার ৮২৫ সুবিধাভোগী পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় টিসিবির পণ্য পাওয়ার তালিকায় নাম আছে ১৮ হাজার ৮৭৯ জনের। এর মধ্যে পৌর এলাকায় ৩ হাজার ১৫৪টি কার্ড। ইউনিয়ন পর্যায়ে মোট ১৫ হাজার ৬২৫টি স্মার্টকার্ডের মধ্যে এসেছে ১ হাজার ৫৪টি। এসব কার্ডধারী জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পণ্যও পেয়েছেন। বাকি ১৭ হাজার ৮২৫ জন এখনও বঞ্চিত রয়েছেন। পণ্য সরবরাহের জন্য এ উপজেলায় টিসিবির তিনজন ডিলার রয়েছেন।
জানা গেছে, আগে হাতে লেখা ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের টিসিবির পণ্য দেওয়া হতো। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সুবিধাভোগীদের স্মার্টকার্ডের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু সাতটি ইউনিয়ন এলাকায় ১ হাজার ৫৪টি কার্ড চূড়ান্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কার্ডই এখন পর্যন্ত আসেনি। এর আগে ডিসেম্বর মাসের পণ্য বিতরণের পর থেকে পণ্য বিতরণ বন্ধ ছিল এই উপজেলায়। সম্প্রতি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বল্পকিছু কার্ডের তিন মাসের পণ্য বিতরণ করা হলেও পৌর এলাকায় ৩ হাজার ১৫৪টি কার্ড না আসায় তাদের পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। স্মার্টকার্ডের কারণে পাঁচ মাস ধরে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ডিলাররা।
পৌর এলাকার সুবিধাভোগী দিনমজুর বাবু মিঞা, মাসুদ হোসেন, লাইলী বেগম, সোহরাব হোসেন, ছালাম মিঞাসহ কয়েকজন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টিসিবি পণ্যের কারণে সংসারের খরচ কিছুটা বাঁচাতে পারি। পাঁচ মাস ধরে তাও পাচ্ছি না। সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতেও টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা এখনও পাচ্ছি না। প্রশাসন ইচ্ছা করলে স্মার্টকার্ড ছাড়াও আগের কার্ড দেখেও বিতরণ করতে পারে।’
মেসার্স বৈশাখী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ডিলার কামরুজ্জামান শাহ কামরু ও মেসার্স শাহারিয়ার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ডিলার আবদুল লতিফ বলেন, যত স্মার্টকার্ড এসেছে সে অনুযায়ী প্রতি মাসের টিসিবির পণ্য উত্তোলন করে মজুত রাখা হয়েছে। সব স্মার্টকার্ড না আসার কারণে বিতরণ সম্ভব হচ্ছিল না। উপজেলায় প্রায় ১৯ হাজার সুবিধাভোগীর মধ্যে শুধু এ ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪টি কার্ড এসেছে। এসব কার্ডে আপাতত তিন মাসের পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। পৌর এলাকার একটিও কার্ড আসেনি। এ কারণে তাদের পণ্য বিতরণ করা যাচ্ছে না। কার্ড এলেই বিতরণ করা হবে।
একই কথা বলেন মেসার্স ভোলা প্রসাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ডিলার অনিল। তিনি বলেন, ‘যে কয়টি স্মার্টকার্ড এসেছে, সেটুকু পণ্য বিতরণ করেছি আমরা। পৌর এলাকাসহ ইউনিয়নের বেশির ভাগ কার্ড না আসার কারণে পণ্য উত্তোলন এবং বিতরণ করা যাচ্ছে না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইছাহাক আলী জানান, বিতরণ কার্যক্রম একেবারে বন্ধ নেই। কিছু কার্ড এসেছে, সেগুলোর পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। কার্ড জটিলতার কারণে বাকিগুলো বিতরণ করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। সমস্যা নিরসনে অ্যাপের মাধ্যমে কার্ড সাবমিট করা হচ্ছে। আশা করা যায়, শিগগির পুরোপুরি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা যাবে।