মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ‘প্রক্সি ওয়ারে’ জড়াবে না বাংলাদেশ: খলিলুর রহমান

'করিডর নিয়ে কোনো আলোচনা বা সমঝোতা হয়নি'

প্রকাশিত: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, মে ৫, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ‘প্রক্সি ওয়ারে’ জড়াবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আরাকানে প্রক্সি ওয়ার শুরু করছে, এমন গুজব প্রতিবেশী দেশের কিছু গণমাধ্যম ছড়াচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এসব নিছকই অপতথ্য ও গুজব, যা কখনো কাম্য নয়।

রোববার (৪ মে) ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অডিটরিয়ামে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিষয়ক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বিইউপির যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশটিতে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক, এমন কিছুই যে বাংলাদেশ চায় না, সেটা দেশটিকে (মিয়ানমার) আবারও আশ্বস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ হয়ে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার কোনো আলোচনা করেনি। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে কোনো পক্ষের সঙ্গে কোনো সমঝোতাও হয়নি।

রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, তারা রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে চ্যানেলের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আর মানবিক করিডর ও চ্যানেল এক নয়। এমন কিছু (চ্যানেল) হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তা পরিচালিত হওয়ার কথা। আর রাখাইনে কোনো ধরনের মানবিক তৎপরতা পরিচালনার জন্য উভয় পক্ষের সম্মতি আবশ্যক।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, অতীতে কূটনীতি ও সামরিক চাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করা হয়েছে। এখন একটি টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গারা অবশ্যই ফিরে যাবে। এটা সহজ না হলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। রোহিঙ্গাদের কখনোই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, যদি সেটা করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ হবে প্রতিবেশী দেশগুলোর ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যাচাইয়ের জন্য রোহিঙ্গাদের ছয়টি তালিকা দিয়েছে এবং মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার জনের যাচাইকৃত একটি তালিকা পেয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের মধ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা না থাকায় এ সময়ের মধ্যে তাদের প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ এই সংকটের আমরা এখনো একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে পাইনি। এই সংকট মোকাবিলায় শুরুতে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ওপর নির্ভরতার সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, তিনিসহ অনেকেই সতর্ক করেছিলেন যে, এই ধরনের প্রচেষ্টা নিষ্ফল হবে। দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়াকে ‘বৃথা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এক জন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা যায়নি। তবে আমরা কূটনীতি ত্যাগ করতে পারি না, কিন্তু আমাদের এই আশা ছেড়ে দিতে হবে যে শুধু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সফল হবে না।