পিরোজপুরে ব্যস্ত সড়কে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে রঙিন কৃষ্ণচূড়া

প্রকাশিত: ১২:০৩ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২৫

পিরোজপুর প্রতিনিধি:

‎গ্রীষ্মকাল মানেই রোদ আর খরার মৌসুম। কিন্তু সেই খরার মাঝেও প্রকৃতি যেন রঙের তুলিতে আঁকে এক নতুন ছবি। আর সেই ছবির অন্যতম অনিন্দ্য প্রকাশ হলো কৃষ্ণচূড়া ফুল। পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা শহরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে অপূর্ব এক দৃশ্য। শহরের প্রবেশমুখে দণ্ডায়মান দুটি কৃষ্ণচূড়া গাছ যেন স্বাগত জানায় আগন্তুকদের। সড়কের দু’পাশে লাল-কমলার এক অপরূপ রঙে সেজেছে পুরো এলাকা, দেখে মনে হয় যেন ফুল দিয়ে সাজানো কোনো স্বপ্নের দরজা।‎এই কৃষ্ণচূড়া গাছ দুটি এখন শুধু গাছ নয়, হয়ে উঠেছে নেছারাবাদের সৌন্দর্যের প্রতীক। গ্রীষ্মকালের প্রখর রোদেও এই রঙিন দৃশ্য এনে দেয় প্রশান্তি।

‎সরজমিনে দেখা যায়, নেছারাবাদ উপজেলার মূল শহরের প্রবেশ মুখেই দাঁড়িয়ে আছে দুটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছ দুটিতে রক্ত লাল ফুল ফুটে আছে। ফুটে থাকা রক্তিম লাল ফুলগুলো সৃষ্টি করেছে এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে গাছ দুটি এমন মুগ্ধতা ছড়ায়। গাছ দুটি দেখে পথচারীরা একটু দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নতুন যারা এ উপজেলায় আসেন গাছের দুটি দেখে তারা অবাক হন কেননা গাছ দুটিকে দেখলে মনে হয় যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে সাজানো একটি দরজা। প্রতিদিন বিকেল হলেই আশেপাশের এলাকা থেকে তরুণ-তরুণীরা এসে ভিড় করেন এই ফুলেল প্রান্তে। কেউ হাঁটেন, কেউ প্রকৃতির সঙ্গে ছবি তোলেন, কেউবা বসে পড়েন গাছের ছায়ায়, প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে যেতে।

‎পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মকালীন রঙিন ফুলের গাছ হিসেবে বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম- ডেলোনিক্স রেজিয়া। লাল ফুলকে কৃষ্ণচূড়া এবং হলুদ ফুলকে রাধাচূড়া বলা হয়। মাদাগাস্কারে এর উৎপত্তি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে এটি একটি পরিচিত দৃশ্য। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই ফুল ফোটে। কৃষ্ণচূড়া গাছ সাধারণত ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এর ডালপালা জুড়ে লাল-কমলা রঙের ফুল ফুটে ওঠে, যা একে অন্যান্য গাছ থেকে আলাদা করে তোলে। এছাড়া পাখির বাসার মতো বিস্তৃত ডালপালা আর ছায়া প্রদানকারী বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি ছায়াগাছ হিসেবেও বিখ্যাত। এটি শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং নগরের তাপমাত্রা কমানো এবং বায়ু পরিশোধনে সহায়ক একটি বৃক্ষ। তবে সম্প্রতি অনেক এলাকায় কৃষ্ণচূড়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সচেতন বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এই সৌন্দর্যময় গাছটিকে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

‎স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর আহমেদ বলেন, এই কৃষ্ণচূড়া গাছ দুটি যেন আমাদের শহরের গেটওয়ে। বাইরে থেকে কেউ এলে সবার আগে এ দুটো গাছ দেখে মুগ্ধ হয়। গাছ দুটি দেখতে আমরা প্রায়ই এখানে আসি। জায়গাটা আমাদের খুবই ভালো লাগে।

‎পিরোজপুর শহর থেকে নেছারাবাদে অফিসের কাজে এসেছেন তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কৃষ্ণচূড়া গাছ দুটি দেখতে অসাধারণ মনে হয় গাছ দুটি আমাদের বরণ করে নিচ্ছে। বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছ। ভবিষ্যতে এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় রেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো উচিত।
‎স্থানীয় এক দর্শনার্থী রিমা আক্তার বলেন, প্রতিদিন কাজ শেষে মনটা একটু শান্তির খোঁজে এদিকেই চলে আসে। গাছ দুটির ফুলের রঙ আর পরিবেশ আমাকে বারবার মুগ্ধ করে। পাশেই নদী গরমের ক্লান্তি যেন এখানে এসেই ভুলে যাই। এ জায়গাটা এখন আমাদের মতো অনেকের জন্যই প্রিয় এক আশ্রয়।

‎নেছারাবাদের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি কৃষ্ণচূড়া গাছ যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। শুধু সৌন্দর্য নয়, এই গাছগুলো এলাকার মানুষদের মাঝে তৈরি করেছে এক আবেগময় বন্ধন। তাই এ ধরনের বৃক্ষের সংরক্ষণে সকলে সচেতন হবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।