
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
কাঁচাবাজারে নিষিদ্ধের ছয় মাস পার হলেও দেদারছে চলছে পলিথিনের ব্যবহার। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কারও এনিয়ে কোনো ধরনের বাছবিচার যেন চোখেই পড়ছে না। ক্রেতারা বাজার করতে যায় খালি হাতে। আর ফিরে আসে পলিথিনের ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে। অন্যদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ বাজারজাতও করছেন।
জানা যায়, ২০০২ সালে পরিবেশের সুরক্ষায় বাংলাদেশে আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে অন্তর্র্বতী সরকার ফের সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। তার এক মাস পর ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতে পলিথিনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অভিযানের কথা জানানো হয়।
একইসঙ্গে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়।
এনিয়ে সরেজমিনে শনিবার (১৯ এপ্রিল) ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সব ধরণের পণ্যই বিক্রি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগে। বিক্রেতারাও সস্তা বলে একে বেছে নেন খুব সহজেই। ক্রেতাদেরও বাড়তি খরচ গুনতে হয় না। কাগজ, কাপড় বা পাটের ব্যাগে খরচ বেশি হওয়ায় এগুলো ব্যবহারে কেউই আগ্রহী নন তারা।
কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার বলেন, ছোট দুইটা ব্যাগ বড় পলিথিনে ঢুকিয়ে ফেলব; নিতে সুবিধা। আমরা সচেতন হয়ে কী করব- ওই সব ব্যাগ তো কোথাও পাওয়া যায় না। পেলে ব্যবহার করতাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘আমরাও সচেতন পলিথিন নিয়ে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখন বিকল্প কিছু ব্যবহার করতে পারছি না।’
পলিথিন ব্যাগ বিক্রেতা বলেন, এখন আগের চেয়ে কম বিক্রি হচ্ছে। অনেকে বিকল্প খুঁজছে। তবে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, মুসলিম বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি বাজারের ব্যাগ। দোকানটির বিক্রেতা রাকিব বলেন, এগুলো যে নিষিদ্ধ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর- তা তার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রচার হলে তো জানতে পারব। পাটের ব্যাগই তো দেখি না। মুসলিম বাজার পুরাটা ঘুরবেন- কোনো দোকানদারের কাছে পাইবেন না। খালি এখানে না, সব জায়গায়। হকাররা ব্যাগ নিয়ে আসে, তাদের কাছেও নাই।
সবজি বিক্রেতা আজিজুল ভূঁইয়া বলেন, সরকার পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করতে পারলে সেগুলো ভোক্তা পর্যায়ে আসত না। তারাও ব্যবহার করতেন না।
তিনি আরও বলেন, পলিথিনের দোকান খোলা, আমাদের তো কাস্টমারকে দিতে হয়। আরও পাঁচজন দিতেছে, আমি না দিলে কেমনে হইব? বিকল্প ব্যাগই তো নাই। এটার জন্য সরকারের উদ্যোগ নিতে হইব।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহারের প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে। তবে এর বিকল্প আমরা তাদের হাতে দিতে পারিনি। পলিথিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযান পরিচালনা হচ্ছে তাতে পদ্ধতিগত ভুল রয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পলিথিনের ব্যবহারিক মূল্য সস্তা মনে হলেও এর পরিবেশগত ক্ষতির মূল্য অনেক বেশি। ক্রেতা হিসেবে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করার চর্চা করলে সফল হওয়া সম্ভব। তাই ‘পলিথিন মুক্ত প্রতিদিন’- এমন মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এই ব্যাগের প্রথাগত বিকল্প আছে। অথচ মুনাফার আশায় পলিথিন ব্যাগ কারখানার মালিকরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।