দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ২৭ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ৪:৩১ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৫

সেলিনা আক্তার:

 

২০২৪ সালের আগস্টে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বাঞ্চলের পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশকে ২৭ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপারেডনেস অ্যান্ড রেসপন্স’ নামক প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে। এতে বন্যা প্রতিরোধক অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবিকা উন্নয়ন এবং কৃষি খাতে সহনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্পের ফলে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশ যেভাবে অভিযোজিত হচ্ছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। নতুন এই প্রকল্প দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবিকায় টেকসই সহায়তা দেবে।’

প্রকল্পের আওতায় ৭৯টি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে, যেগুলো স্বাভাবিক সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া সড়ক ও সেতু পুনর্গঠন, বাঁধ ও খাল পুনঃখনন এবং আধুনিক পূর্বাভাসব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্থানীয় জনগণের দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য দেওয়া হবে নৌকা, যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্প দলের প্রধান স্বর্ণা কাজী জানান, এই প্রকল্প শুধু তাৎক্ষণিক পুনরুদ্ধার নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ সহনশীলতা গঠনের দিকে নজর দেবে। অবকাঠামোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একটি সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে।

প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ নগদ সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এছাড়া ৬৫ হাজার কৃষক পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে। নারীদের সম্পৃক্ত করে গড়ে তোলা হবে পারিবারিক বাগান ও ‘বীজ গ্রাম’। কৃষকগোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে কৃষিতে টেকসই চর্চা প্রচারে কাজ করা হবে, যা খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বন্যা পুনরুদ্ধার–সংক্রান্ত অন্যান্য উদ্যোগে সাধারণত যেসব খাত অন্তর্ভুক্ত হয় না, এই প্রকল্পে সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা প্রকল্পটিকে আরও বিস্তৃত ও কার্যকর করে তুলবে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সহায়তা দেওয়া প্রথম দাতা সংস্থা ছিল বিশ্বব্যাংক। এ পর্যন্ত সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে, যার অধিকাংশই সুদমুক্ত ঋণ ও অনুদান। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ সুদমুক্ত ঋণগ্রহীতা দেশ।