চট্টগ্রামে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে জোর প্রস্তুতি চলছে

প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

অর্ন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো নিজ জেলা চট্টগ্রামে যাচ্ছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে স্বাগত জানাতে বন্দরনগরীতে জোর প্রস্তুতি চলছে।

চট্টগ্রামের জনগণ ১৪ মে তাদের বিশ্ববরেণ্য কৃতিসন্তানকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। যিনি ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওইদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিশ্ববিদ্যালটি তার পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামের পাশে অবস্থিত।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূস জোবরা গ্রামও পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ গ্রামেই তিনি তার প্রথম ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম বলেন, অর্ন্তর্বতী সরকারের প্রধান হিসেবে চট্টগ্রামের জনগণ তাদের মাটির সন্তানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিজ জেলায় বহুল প্রতীক্ষিত সফরটি সফল করতে আমরা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুসারে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধান উপদেষ্টার সফরসূচি অনুসারে, তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে একটি সভায় যোগ দেবেন। সেখানে বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে বন্দরের চলমান কার্যক্রম, কর্মক্ষমতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ চলমান ও প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিয়ে একটি মাল্টি-মিডিয়া উপস্থাপনা করা হবে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে যাবেন। সেখানে তিনি কর্ণফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন, যা বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একটি অংশসহ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের বিশাল জনগোষ্ঠীর বহুল প্রতীক্ষিত সেতু।

প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে সার্কিট হাউস ত্যাগ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠান।

সমাবর্তনে ২০১১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র প্রদান করা হবে। এই অনুষ্ঠানে ২২ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি (২০১৫-২০২৫) প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ইউনূস অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দারিদ্র্য বিমোচন ও বিশ্ব শান্তিতে অসামান্য অবদানের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একসময়ের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সিআর আবরার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সফল করার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি, এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি দেশের যেকোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হবে। কারণ এই জমকালো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রায় এক লাখ মানুষ চবি ক্যাম্পাসে সমবেত হবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছোট ছোট পাহাড় ও টিলাজুড়ে বিস্তৃত ২ হাজার ৩০০ একর জমির ওপর নির্মিত ক্যাম্পাসকে আরও সুন্দর ও মনোরম করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে।