আওয়ামী লীগের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধে ধারা উল্লেখ করে চিঠি

প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি (এনসিএসএ)। যদিও সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি চিঠিটি দিয়েছে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের একটি ধারার কথা উল্লেখ করে। যদিও অধ্যাদেশটি এখনো জারি হয়নি। শুধু উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, অধ্যাদেশ জারি হওয়ার আগে সেটি আইনে পরিণত হয় না। সেটি অধ্যাদেশের ধারা বলে সরকারি চিঠি দেওয়ার সুযোগ নেই।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কোনো অধ্যাদেশ যতক্ষণ না আইনে পরিণত ও কার্যকর হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার প্রয়োগ করা যায় না। রাষ্ট্রীয় কাজ নিয়মকানুন মেনে হতে হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাযজ্ঞের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ১২ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই দিন রাতে নির্বাচন কমিশনও রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের পর অনলাইন মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধে উদ্যোগী হয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন সংস্থাটি গত মঙ্গলবার চিঠি দেয় বিটিআরসিকে। চিঠিতে মেটা (ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান), এক্স (সাবেক টুইটার), গুগল ও টিকটককে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্লক করার জন্য নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হয়।

সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির চিঠিতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’–এর ৮ নম্বর ধারার ক্ষমতা প্রয়োগের কথা বলা হয়। ৬ মে এই অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।

আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাদেশটি এখন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। গতকাল বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত অধ্যাদেশটির গেজেট (প্রজ্ঞাপন) হয়নি, অর্থাৎ আইনটি কার্যকর হয়নি।

যে অধ্যাদেশ এখনো জারি হয়নি, তার অধীন চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি ও আইসিটি বিভাগে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অনুমোদিত খসড়ার ধারা ৮ এবং বিদ্যমান সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারা ৮–এর বিধান একই। অধ্যাদেশে শুধু নতুন করে যুক্ত হয়েছে, ‘স্বচ্ছতার স্বার্থে সরকার সকল ব্লক হওয়া কনটেন্টের তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’

ওই কর্মকর্তার দাবি, যেহেতু ধারা একই, সেহেতু চিঠি দিতে সমস্যা থাকার কথা নয়।

নতুন অধ্যাদেশের খসড়ার ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বিশ্বাস করে যে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য যা সহিংসতা তৈরিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করে এবং এর মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা প্রদান করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বা প্রয়োজনে বিটিআরসিকে অনুরোধ করবেন।’

সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইউআরএল বা লিংকগুলো সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫–এর ধারা ৮ অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ব্লক বা অপসারণ করা প্রয়োজন।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির চিঠি পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই মেটা (ফেসবুক), এক্স, গুগল (ইউটিউব), টিকটকসহ সমজাতীয় প্ল্যাটফর্মকে ‘রিপোর্ট’ করা হয়েছে, অর্থাৎ সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। যাতে তারা ব্যবস্থা নেয়। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট বন্ধের জন্য টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরকেও বলা হয়েছে।

ফেসবুক, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো কোনো পেজ বা চ্যানেল বন্ধ করবে কি না, তা নির্ভর করে তাদের নীতিমালার ওপর। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং আইনি যুক্তি তুলে ধরে চিঠি দিতে না পারলে ফেসবুক ও ইউটিউব সাধারণত সরকারের অনুরোধ রাখে না।