কোরবানির বাজার বন্যায় ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে ফেনীর খামারিরা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

ফেনী প্রতিনিধি:
এক মাসের কম সময় বাকি পবিত্র ঈদুল আজহার। এ উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে পশু কেনা-বেচা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ফেনীর খামারি, ক্রেতা ও ব্যাপারীরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে পশু পরিচর্যা ও বন্যার ধকল কাটিয়ে বাজার ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি, পশু খাদ্যের দামের প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিক ভাবে লালন-পালন করা হচ্ছে ৮৭ হাজার ২২৭টি গবাদি পশু। এরমধ্যে ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, ১ হাজার ৬৬৭টি মহিষ এবং ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল ও ৩ হাজার ১৪৭টি ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে গেল বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৮৭ হাজার ২০০টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হয় ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।
ফুলগাজীর মদিনা এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম বলেন, একসময় প্রবাসে ছিলাম। তারপর ২০২১ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে গরু লালন-পালন করছি। চলতি বছর খামারে প্রায় দুই শতাধিক গরু রয়েছে। সময়ের সঙ্গে গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। সেই অনুযায়ী দামও কিছুটা বেশি হবে স্বাভাবিক। সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ না করলে লাভবান হওয়া যাবে
পরশুরামের খামারি আবদুল মতিন বলেন, গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার সবকিছু অনুকূলে থাকলে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু প্রায় সময় কোরবানির শেষসময়ে বাইরে থেকে গরু আসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এবার কোরবানির বাজারের জন্য ১৫টি গরু ও ৭টি ছাগল প্রস্তুত করেছি। বাজারদর অনুকূলে থাকলে আশা করি হাটে ভালো দাম পাব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক খামারি বলেন, জেলার পরশুরামের, ফুলগাজীর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কিছু এলাকা দিয়ে বছরজুড়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে। এমনটি অব্যাহত থাকলে কোরবানির বাজারে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।
বিজিবি সূত্র জানায়, ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে অবৈধপথে ভারত থেকে আসা ১২৩টি গরু আটক করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু রয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে যেন কোনো গরু না আসে সেজন্য সীমান্তে বিজিবি সচেষ্ট রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে কোরবানির পশু বিক্রিতে খামারি নিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন কৌশল। মোহাম্মদ আরাফাত নামে এক খামারি বলেন, ইতোমধ্যে খামারে এসে ক্রেতারা গরু কেনা শুরু করেছে। অনেকে আগে এসেই পশু কিনে রাখছে। যা কোরবানির আগেরদিন পর্যন্ত খামারে রাখতে পারবেন। এছাড়া ক্রেতা চাইলে খামারে এসে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর দৈহিক ওজন মেপেও গরু কিনতে পারছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনীতে এবার কোরবানির পশু সংকটের শঙ্কা নেই। জেলায় অন্তত ৫ হাজার তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কোরবানির পশু লালন-পালন করছেন। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষ্যে পেশাদার ও মৌসুমি কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অবহিতকরণ কার্যক্রম করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
পশুর যোগান বেশি থাকায় ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের বাইরে থেকে অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গরু আমদানি বন্ধ করা গেলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবে।