
ডেস্ক রিপোর্ট:
ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর বদলা হিসেবে ‘অপারেশন বানিয়ান মারসুস’ শুরু করেছে। পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
তবে এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস। পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়েছে, পাকিস্তানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের প্রভাবে দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে মুডিস বলছে, এই সংঘাত দীর্ঘ হলেও ভারত অতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এক নোটে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থাটি বলেছে, দুই দেশ দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে। এতে পাকিস্তানের চলমান আর্থিক খাত সংস্কারের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এর ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পাকিস্তান সরকার কয়েক বছর ধরে যে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা ব্যাহত হবে।
মুডিস বলেছে, পাকিস্তানের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর উন্নতি হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে বাড়ছে; মূল্যস্ফীতির চাপ কমছে ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে দেশটির যে ঋণ কর্মসূচি চলছে, তার কারণে এসব উন্নতি হয়েছে।
যুদ্ধের আবহের মধ্যে চলমান ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় পাকিস্তানের জন্য নগদ ১০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
তবে মুডিস মনে করে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা দীর্ঘায়িত হলে বা আরও বাড়লে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন যাবে। ফলে দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে আবার চাপ পড়বে। গত কয়েক মাসে দেশটির রিজার্ভ বাড়লেও এখনো তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেই।
এ ছাড়া এরইমধ্যে ১৯৬০-এর দশকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যে সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছিল, ভারত তা স্থগিত করায় পাকিস্তানে পানিপ্রবাহ অনেকটাই কমে যাবে। এতে করে দেশটির ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে মুডিস।
এর বিপরীতে ভারতের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করে মুডিস। সংঘাত দীর্ঘায়িত হলেও যেটা হবে, সেটা হলো, ভারতের সরকারি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ ভোগের কল্যাণে উচ্চ হারেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ভারত।
নোটে মুডিস বলেছে, পাকিস্তানের এই স্থানীয় উত্তেজনা দীর্ঘায়ত হলেও ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না বলেই তারা মনে করে। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক তেমন একটা নেই। ২০২৪ সালে ভারত যত রপ্তানি করেছে, তার মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ গেছে পাকিস্তানে।
যদিও সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়বে; এতে ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধিতে আরেকটু বেশি চাপ পড়তে পারে। স্বাভাবিকভাবেই তখন ভারতের প্রবৃদ্ধিতেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করে মুডিস।