পাকিস্তানে ভারতের হামলা দুঃখজনক, চলমান পরিস্থিতি উদ্বেগের: ইয়াও ওয়েন

প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে দুঃখজনক ও চলমান পরিস্থিতি উদ্বেগের বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা) নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়।

বৃহস্পতিবার সকালে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের পাঁচ দশক: নতুন উচ্চতার দিকে যাত্রা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। সেমিনারে প্রশ্নোত্তর ও উন্মুক্ত পর্বে অর্থনীতিবিদ, সামরিক সাবেক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এএফএম গাউসুল আজম সরকার। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।

সূচনা বক্তব্যে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭ মে ভোরে ভারত পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে সামরিক হামলা চালায়। চীন এটিকে দুঃখজনক বলে মনে করে এবং চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানায়।

তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের প্রতিবেশী এবং সব সময়ে তারা প্রতিবেশী থাকবে। তারা উভয়ই চীনেরও প্রতিবেশী। চীন সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। চীন উভয়পক্ষকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে কাজ করা ও শান্ত থাকার পাশাপাশি সংযম বজায় রেখে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে, এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।

ইয়াও ওয়েন বলেন, বিশ্ব আজ অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যে দিকেই যাক না কেন, চীন ইতিহাসের সঠিক দিকে এবং মানব অগ্রগতির পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। সেই সঙ্গে বিশ্বের স্থিতিশীল এবং শান্তিপূর্ণ শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে চীনের অবস্থান জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘তথাকথিত মানবিক করিডোর’, আমি বলবো এতে চীনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ থেকে যা বুঝেছি, রাখাইনে সংঘাতে আক্রান্ত মানুষের মানবিক সরবরাহের জন্য উদ্যোগটি জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থা নিয়েছিল। আমি জানতে পেরেছি, এতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মি সম্পৃক্ত। তবে চীন এর সঙ্গে যুক্ত নয়।

চীনের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, চীন যেকোনো দেশের সার্বভৌম ও অখণ্ডতায় বিশ্বাসী। আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাই না। চীন আশা করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান করবে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে।

আরাকান স্বাধীন করা নিয়ে জামায়াতের মন্তব্যের বিষয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনৈতিক সংলাপে রাখাইনে তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, আমার ধারণা নাই। আপনারা হয়তো এটি লক্ষ্য করেছেন এ বিষয়ে জামায়াত একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে, যেখানে তারাও বিবৃতির বিষয়ে অস্বীকার করেছে।

তিস্তা প্রকল্পে সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর একটি যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ চীনকে তিস্তা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে স্বাগত জানিয়েছে। আমি বলবো চীন প্রস্তুত। আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করতে চাই। কিন্তু সিদ্ধান্ত একান্তই বাংলাদেশের। বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাতে সম্মান জানাবে চীন। এ প্রকল্প দ্রুত শুরু হওয়ার প্রত্যাশা করছি।