থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসায় রক্তদানের পাশাপাশি ওষুধেও নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৫

সাজ্জাদ হোসেন :

থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)। দেশের সর্ববৃহৎ এই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক-গবেষকরা বলছেন, থ্যালাসেমিয়ার মতো জটিল ও জন্মগত রক্তরোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এখন রক্তদানের পাশাপাশি ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলও মিলছে। এটি থ্যালাসেমিয়ার মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনায় এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে বিএমইউ ক্যাম্পাসে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র‌্যালি পরবর্তী সমাবেশে চিকিৎসকরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এর আগে থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত র‌্যালিটি বি ব্লক ফোয়ারার সামনে থেকে শুরু হয়ে টিএসসি, ডি ব্লক, সি ব্লক ঘুরে কেবিন ব্লকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বিএমইউর উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার ও শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান। সভাপতিত্ব করেন শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম।এবারের থ্যালাসেমিয়া দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল—সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, থ্যালাসেমিয়া রোগীর সু-চিকিৎসা।

আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ রোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এটি একটি বংশগত রোগ হওয়ায় বিবাহের আগে স্ক্রিনিং নিশ্চিত করা এবং দুই বাহকের বিয়ে নিরুৎসাহিত করা জরুরি।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে স্কুল পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

তিনি জানান, বিএমইউ-তে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (বিএমটি) সেন্টার চালুর কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়েছে এবং এটি একনেকে পাস হওয়ায় শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে। বিএমটি চালু হলে রক্তরোগে আক্রান্ত বহু রোগীকে আর বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে না।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার বলেন, গর্ভাবস্থায় স্ক্রীনিংয়ের মাধ্যমে অনাগত শিশুর থ্যালাসেমিয়া ঝুঁকি আগেভাগেই নির্ধারণ করা যায়, যা সময়মতো ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে। তিনি রোগীদের জন্য সহজলভ্য ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসায় নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে—রক্তের পাশাপাশি এখন ওষুধ দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। এতে রোগীদের ওপর রক্তের নির্ভরশীলতা কমছে, যা দীর্ঘমেয়াদে জীবনমান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে আনুমানিক ৬০ থেকে ৮০ হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছে এবং প্রতি বছর নতুন করে ৬ থেকে ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বিএমইউ-এর শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের বহির্বিভাগে প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে সম্মিলিতভাবে বিভাগীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রাখার মাধ্যমে বিএমইউ নতুন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।