সরোয়ার তুষার প্রাদেশিক সরকার দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, এই মুহূর্তে দরকার নেই

প্রকাশিত: ৪:১৫ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

জনসংস্কার কমিশনের ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা যাবে এমন নয়টি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার। তিনি বলেছেন, প্রাদেশিক সরকারকে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা মনে করছি। এটা এই মুহূর্তে দরকার নেই।

আজ মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে হওয়া বৈঠকের বিরতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সংসদে স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দল থাকতে হবে। আজকে আলোচনা এসেছে যে, সকল মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে না হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় আছে সেই মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দল থেকে প্রধান হবেন। যেমন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এগুলোর প্রধান যেন বিরোধী দল থেকে হয় সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি আরও বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আমাদের যে মতামত ছিল সেখানে আমরা বলেছি যে, সরকারের স্থিতিশীলতা এবং সংসদ সদস্যদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা— তথা দলের বিরুদ্ধে ভোট প্রদানের অধিকারের পক্ষে আমরা অবস্থান নিয়েছি। যে কারণে আমরা বলেছিলাম যে, অর্থবিল এবং অনাস্থা ভোট বাদে, অন্য যেকোনো সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন।

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দলের সংসদ সদস্যরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন, এমন বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের আওতায় কী কী কাজ করতে পারবে, কী কী ধরনের বিচারিক ক্ষমতা থাকবে— এগুলো আলোচনায় এসেছে।

এনসিপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহির আওতায় কীভাবে আনা যাবে, সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন মত আছে। কমিশন প্রস্তাব করেছে সংসদীয় কমিটির মধ্য দিয়ে একটা তদন্ত করা হবে। অনেক রাজনৈতিক দল মত প্রকাশ করেছে। এতে করে রাজনীতি করার একটা সম্ভাবনা থাকে। অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে এটা সমাধান করা যেতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। নিম্নকক্ষ এবং উচ্চ কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের পরে গণভোটের বিধান থাকতে হবে। এর মধ্যদিয়ে সংবিধান সংশোধন হবে। মাইনর সংশোধন যদি হয়, সেক্ষেত্রে গণভোটে যেতে হবে কিনা প্রশ্ন উঠেছে। আমরা স্পেসিফিক করে কয়েকটা ধারা বলে দিয়েছি যে, এই সমস্ত সংশোধনের জন্য অবশ্যই গণভোটে যেতে হবে। পাওয়ার স্ট্রাকচার বা পিএম বেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বা মূলনীতি সংশোধনের জন্য গণভোটে যেতে হবে। রুটিন সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশই যথেষ্ট।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। জ্যেষ্ঠ তিনজনের মধ্যে একজনকে বাছাইয়ের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলেছে। যিনি জ্যেষ্ঠতম থাকবেন তিনি প্রধান বিচারপতি হবেন।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিটাকে আমরা সমর্থন করেছি। সেখানে দুই পক্ষের সংসদ সদস্যদের বাইরে জেলা কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কাউন্সিল রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করবে। আরও স্থানীয় প্রতিনিধি যোগ করার জন্য আমরা বলেছি।

এমসিপির এই নেতা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন অর্থবছরে একবার করে তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য বলেছে কমিশন। আমরা বলেছি, প্রতি আয়কর বছরই এটা করা দরকার। প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের হিসাব দিতে বাধ্য থাকবে।

নিম্নকক্ষে নারী আসন নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছিল, আজকেও আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০০ আসনে সরাসরি নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ১০০ জন নারী পার্লামেন্টে যাবেন। এটাকে আমরা সমর্থন করছি। উচ্চ আসনে ১০০ জনের ২৫ শতাংশ নারী রাখার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রাদেশিক সরকারকে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা মনে করছি। এটা এই মুহূর্তে দরকার নেই। আমরা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে পারি। এর বাইরে দুটি নতুন বিভাগের প্রস্তাব তারা করেছিলেন— ফরিদপুর এবং কুমিল্লা। আমরা এটার সাথে একমত হয়েছি।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলা গ্রহণের ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন। আমরা দ্বিমত করেছি। বিচারিক ক্ষমতা বিচার বিভাগে থাকার জন্য আমরা বলেছি, যোগ করেন তিনি।

সরোয়ার তুষার বলেন, জেলা পরিষদ বাতিলের প্রস্তাব করেছে, আমরা বলেছি না, জেলা পরিষদ থাকা দরকার। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্তির কথা বলেছেন, আমরা বলেছি না। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মেম্বারদের ভোটে নির্বাচিত করার কথা বলেছেন। চেয়ারম্যান সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক যেন না থাকে। এটার কারণে আমাদের সমাজে সহিংসতা একেবারে গভীর পর্যন্ত পৌঁছেছে। আমাদের ভয়ংকর একটা সাংস্কৃতিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ভালো ভালো যেসব ব্যক্তি আছেন তারা তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তার জন্য দলীয় প্রতীক বাতিল করা দরকার।

তিনি বলেন, স্বতন্ত্র ভূমি আদালতের কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত পজিটিভ। কাঠামোগত দিক কী ধরনের হবে, এটা নিয়ে কমিশনের সাথে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।