
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও কোচ-সংকটের কারণে সারা দেশে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে বন্ধ রয়েছে ৭০টি ট্রেন। এর মধ্যে ৩৩টি কমিউটার ট্রেন, ২১টি লোকাল, ১০টি মিশ্র, চারটি মেইল ও দুইটি শাটল ট্রেন। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইঞ্জিন ও কোচ-সংকট এবং জনবল স্বল্পতার কারণে সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ ট্রেনের মধ্যে সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটের উত্তরবঙ্গ মেইল বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলোর একটি। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সারা দেশেই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর অন্যগুলো চালু হলেও ট্রেনগুলো তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে।
পূর্বাঞ্চলে বন্ধ ৩২টি ট্রেন :সংস্থাটির তথ্য বলছে, পূর্বাঞ্চল রেলে বন্ধ রয়েছে মোট ৩২টি ট্রেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটের দুটি লোকাল, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রুটের চারটি লোকাল, সিলেট-ছাতকবাজার রুটের চারটি লোকাল, আখাউড়া-সিলেট রুটের দুইটি মেইল, লাকসাম-চাঁদপুর রুটের দুইটি কমিউটার, লাকসাম-নোয়াখালী রুটের দুইটি কমিউটার, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটের ছয়টি কমিউটার, চট্টগ্রাম-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রুটের চারটি কমিউটার, ঢাকা-হাই-টেক সিটি রুটের দুইটি কমিউটার ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের চারটি কমিউটার ট্রেন।
পশ্চিমাঞ্চলে বন্ধ ৩৮টি ট্রেন :পশ্চিমাঞ্চল রেলে গোয়ালন্দ-ঈশ্বরদী ও ঈশ্বরদী রাজবাড়ী রুটে একটি করে মিশ্র ট্রেন, রাজবাড়ী-গোয়ালন্দঘাট রুটে একটি লোকাল, ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর রুটে দুটি লোকাল, পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুটে দুটি মিশ্র, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে দুটি শাটল, রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রুটে দুটি কমিউটার, ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে দুটি কমিউটার, সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটে দুটি মেইল, পার্বতীপুর-লালমনিরহাট রুটে দুটি কমিউটার, পার্বতীপুর-পঞ্চগড় রুটে দুটি কমিউটার, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর রুটে দুটি কমিউটার, রংপুর-লালমনিরহাট রুটে একটি কমিউটার, কাউনিয়া-রমনাবাজার রুটে একটি কমিউটার, রমনাবাজার-রংপুর রুটে আরও একটি কমিউটার ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এর বাইরে লালমনিরহাট পার্বতীপুর রুটে দুইটি করে লোকাল ও মিশ্র ট্রেন, পার্বতীপুর-পঞ্চগড় রুটে দুটি করে লোকাল ও মিশ্র ট্রেন, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে দুটি করে লোকাল ও মিশ্র ট্রেন এবং সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে দুটি লোকাল ট্রেন ।
অপর দিকে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন, মিতালি এবং মৈত্রী—এই তিন জোড়া অর্থাৎ ছয়টি ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
ইঞ্জিন সংগ্রহের জন্য রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে—মহাপরিচালক :ইঞ্জিন সংগ্রহের জন্য রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আফজাল হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মিটার গেজ ও ব্রড গেজ মিলিয়ে সারা দেশে এখন আরও ৯০টির মতো ইঞ্জিন প্রয়োজন। নতুন ইঞ্জিন কেনার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে এডিবির অর্থায়নে মিটার গেজের জন্য ৩০টি ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’ বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলো পুনরায় চালু করতে সবার আগে নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ করা জরুরি বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে চালু আছে ২৭৫টি ট্রেন :বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, সারা দেশে মোট ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫৮টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৬২টি। কমিউটার ও মেইল ট্রেন চলাচল করে ১২৮টি। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৬০টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে চলে ৬৮টি। এছাড়া সারা দেশে আটটি কনটেইনার ট্রেন এবং ১৯টি গুডস ট্রেন চলাচল করে। সব মিলিয়ে বর্তমানে চালু আছে ২৭৫টি ট্রেন।
রেলের বহরে ইঞ্জিন ২৯৭টি, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে ৫১ শতাংশ :বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে রেলের বহরে মোট ইঞ্জিন রয়েছে ২৯৭টি। এর মধ্যে মিটারগেজ ইঞ্জিন ১৬৭টি ও ব্রডগেজ ইঞ্জিন ১৩০টি। রেলট্র্যাকে যুক্ত হওয়ার পর একটি ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল রয়েছে রেলওয়েতে এমন ইঞ্জিনের সংখ্যা ১৪৭টি। বাকি ১৫০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫০টি ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রয়েছে ১৬টি। অবশিষ্ট ৮৪টি ইঞ্জিনের বয়স ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বর্তমান রেলওয়ের বহরে থাকা ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে ৫১ শতাংশের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে।