শ্রম উপদেষ্টা শ্রম মন্ত্রণালয়ে কোনো ক্রাইসিস হলে আমরা কাউকে খুঁজে পাই না
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক :
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ে যখনই কোনো ক্রাইসিস হয় তখন আমরা কাউকে খুঁজে পাই না।
তিনি বলেন, কিন্তু ক্রাইসিসটা আমাদের। আমরা যদি একচুয়ালি কেউ হিসেবে কাজ না করি, আর যদি এখানে বলে যাই– আমি একজনকে বললাম, সে আরেকজনকে বলল, এটা কিন্তু ফাংশনাল হবে না। আমরা গত সাত মাসের মধ্যে অনেকগুলো সমস্যায় পড়েছি। এগুলো কিন্তু এই সাত মাসের মধ্যে হয়নি, আগেই তৈরি হয়েছে। এ প্রবলেমগুলো তৈরি হয়েছে ২০১৯ সালে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আয়োজিত ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি বিষয়ক কনফারেন্স ২০২৫’ এ এসব কথা বলেন তিনি। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা।সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সচিব কয়টা গার্মেন্টসের কথা বললেন। তারা সেসব গার্মেন্টসের শ্রমিকদের ২০২১-২২ সালে চাকরিচ্যুত করেছে। তারা এখন ফেরত এসেছে। এখন তারা টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থা যদি হয়, তাহলে সমস্যা সমাধান কত বছরের মধ্যে, আমরা এগুলো কীভাবে ফেরত দেব, এগুলো কত বছরের মধ্যে কার্যকর হবে— সেগুলোর টাইমলাইন আমরা কীভাবে দেব। আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি, দেখি কি হয়।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, সব মন্ত্রণালয় একা কাজ করতে পারে না। সব কিছু আবার মন্ত্রণালয়ের আওতায়ও না। যেমন ধরুন জাহাজ ভাঙ্গা শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। সেটা ইন্ডাস্ট্রি মিনিস্ট্রির মধ্যে। সেখানে যদি শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাহলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। আমি সিনসিয়ারলি বলছি, আমরা বসব, দেখব কি করা যায়। কতগুলো ইনফরমাল সেক্টরের কথা আপনারা বলেছেন। আমরা সেগুলোকে একটা জায়গায় আনতে চেষ্টা করব, এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, আমরা এমন একটা বাংলাদেশে আছি যেখানে রাতে মানুষজন ঘুমিয়ে আছে তাদের ওপরে ট্রাক চলে যায়। আমরা এমন একটা দেশে আছি যদি কোনো গার্মেন্টসে পাঁচ দিন আগুন লাগে তবে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখানে হেল্প অ্যান্ড সেফটির যে বিষয়টি, সেটি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বেইলি রোডে রেস্টুরেন্টে যে দুর্ঘটনা হয়েছিল, আমি আমার আগের পজিশনে তখন ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া হলো। প্রাইম মিনিস্টার অফিসে একটা মিটিংয়ে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো ঢাকা সিটির রেস্টুরেন্টগুলোর সমস্যাগুলো কোঅর্ডিনেট করে আইডেন্টিফাই করার। খুবই ইন্টারেস্টিং পার্ট, ঢাকা শহরের যত রেস্টুরেন্ট আছে একটা রেস্টুরেন্টেও বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।
এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ফার্স্ট আমি যে একটা ইন্ডাস্ট্রি করব সেটার বিল্ডিং কোড যদি না মানা হয়, তাহলে সেখানে তাদের সেফটি কীভাবে এনশিওর করব। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে এখানে, এটার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা, প্রথমে সেটা কিন্তু তাদের ওখান থেকেই শুরু হয়। আমাদের দেশে যে আইন আছে দেখবেন প্রত্যেকটা ফ্যাক্টরি পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েছে। ফায়ার সেফটির সার্টিফিকেট নিয়েছে। কেমিক্যাল যে এক্সপোজারগুলো আছে, সেখানে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট আছে। কিন্তু বাস্তবে কি দাঁড়াচ্ছে, যখন একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা নড়েচড়ে বসি।
১১২ জন শ্রমিকের সেক্রিফাইসে আজ ৫ আগস্ট হয়েছে। ৫ আগস্টের পর নতুন সরকার এখান আছে বলেও জানান তিনি।
শ্রম সচিব বলেন, স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছর পরে এখনো ওএসএইচ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে ডিবেট করতে হয়। লজ্জা হওয়া উচিত এ জাতির জন্য, এটা কোনো ডিবেটের বিষয় না। এগুলো মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়। একটা মানুষ কাজে যাবে, সেখানে আমরা মৃত্যুকূপ তৈরি করে রেখেছি। এই দেশে আমরা আছি।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মে মাসে আমরা যেটা করতে চাই, আমাদের কমিশনের যে রিপোর্ট আছে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিটা বিষয় নিয়ে কীভাবে সামনের দিকে এগোবো সেটা নিয়ে কাজ করব। এ সরকার যে কয়দিন আছে, তার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের শ্রমিকের যে অধিকার, আমরা সেটা সেই লেভেলে নিয়ে যাব।
বাংলাদেশে নিযুক্ত আইএলওর বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন বলেন, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আইএলও পাশে রয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আইএলওর মৌলিক কনভেনশন, বিশেষ করে কনভেনশন ১৫৫ (পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা) এবং কনভেনশন ১৮৭ (প্রচার কাঠামো) গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করে। প্রতিরোধমূলক কৌশলে বিনিয়োগ, তথ্যভিত্তিক নীতিমালা গ্রহণ এবং ত্রিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে কর্মীদের অধিকার সুরক্ষা এবং সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।
কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ওমর মো. ইমরুল মহসিন। আরও আলোচনা করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ও সিইও ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের ট্রাস্টি রূপালী চৌধুরী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের উইমেন সেক্রেটারি চায়না রহমান প্রমুখ।
কনফারেন্সে ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক (সাধারণ অধিশাখা) ও আইএলও অ্যাডভান্সিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক প্রজেক্টের কোঅর্ডিনেটর মো. মতিউর রহমান এবং ‘বাংলাদেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি: অগ্রগতি ও করণীয়’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. হাসনাত এম. আলমগীর।