সহজ রাস্তায় বেশি দিন চলতে পারি না: মৌটুসী বিশ্বাস

প্রকাশিত: ৩:২২ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২৫

বিনোদন ডেস্ক:

 

মৌটুসী বিশ্বাস। অভিনেত্রী ও মডেল। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘প্রিয় সত্যজিৎ’। এ ছবি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে সমকালের সঙ্গে কথা হয় অভিনেত্রীর।

বেশ বিরতির পর ওটিটিতে আপনার কাজ মুক্তি পেল। ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া জানার কি সুযোগ হয়েছে?
খুব ধুমধাড়াক্কা সিনেমা নয় এটি। এটি ধীরগতির একটি সিনেমা, তাই সবাই পছন্দ করবেন কি করবেন না- এটি একটি ব্যাপার। তবে যতটা আশা করেছিলাম এর থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছি। পরিচিতজনদের মধ্যে যারাই সিনেমাটি দেখেছেন, তারা ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেছেন।

এখানে আপনি নির্মাতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রটি হয়ে ওঠার জার্নি কেমন ছিল?
আমি এই সিনেমায় একজন সূত্রধর। এখানে আমার ব্যক্তিগত জীবন সূক্ষ্মভাবে আসে। সিনেমার প্রধান অভিনেতা আহমেদ রুবেল ভাইয়ের চরিত্রটি ফ্লোরিশ করার জন্য ব্যাকড্রপে কাজ করেছি। চরিত্রটি আত্মস্থ করার জন্য আমার কাছের দু’জন নির্মাতার কাছ থেকে নির্মাণের খুঁটিনাটি জেনেছি। আর নির্মাতা প্রসূন রহমান চরিত্রটি ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখানে আমি আশা করছি না, আমার নিজের অভিনয় নিয়ে ভালো কিছু শুনব। তবে সিনেমাজুড়েই ছিলাম। সিনেমার নায়িকা আমি। এখানে অভিনয়ের কতটা সুযোগ ছিল, সেটাই আমার কাছে মুখ্য।

 

এ ছবিতে অভিনয়ে আগ্রহী হয়েছিলেন কেন?
আমি সত্যজিৎ রায়ের ভক্ত। বরেণ্য এ চলচ্চিত্রকারের কারণেই অভিনয়ে আগ্রহী হয়েছি। ‘পথের পাঁচালি’ বইটি বাবাই আমাকে কিনে দিয়েছিলেন। তারপর তাঁর অমর এই সৃষ্টি পর্দায় দেখেছি। সত্যজিৎ রায়কে ট্রিবিউট দেওয়া হবে আর সেই সিনেমায় আমি অভিনয়ের সুযোগ পাব, এটা আমার জন্য একটি সাংঘাতিক ব্যাপার। বলতে পারেন এটি আমার জন্য সারপ্রাইজ।

সিনেমার চরিত্রের মতো বাস্তবেও আপনি একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন…
প্রিয় সত্যজিৎ সিনেমায় অভিনয়ের পর তিন বছর ধরে ‘অতিথি’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছি। ওই সিনেমায় অভিনয়ের সময় নির্মাণের অভিজ্ঞতা অতটা ছিল না। এখন আমি হাতেকলমে কিছুটা হলেও জানি। কাজটি দারুণ হয়েছে। আমি নিজেও আপ্লুত। এখানে আমাকে ক্যামেরার সামনেও আসতে হয়েছে।

প্রয়াত অভিনেতা আহমেদ রুবেলকে নিয়ে কোনো স্মৃতিকথাৃ
আহমেদ রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে পর পর দুটি কাজের সুযোগ হয়েছে। তাঁর খুব স্নেহ পেতাম। গাজীপুর থেকে এসে তিনি সিনেমার শুটিং করতেন। তাঁর সেটে পৌঁছানো নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় থাকতাম। রুবেল ভাই সেটে প্রায়ই ফল নিয়ে আসতেন। চারটি আনলে আমাকে জোর করে দুটি খাওয়াতেন। আমি একটু বেশি রিহার্সেল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। রুবেল ভাই খুব ধৈর্য নিয়ে আমাকে রিহার্সলের সময় দিতেন। শেষবার আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল ভিডিওকলে। তখন আমাকে তাঁর গাজীপুরের বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে যত স্মৃতি আছে, সবই ভালো স্মৃতি।

 

অভিনয়ে আপনি অনিয়মিত। এর কারণ কী?
আমি একটি কোম্পানিতে পর্যটন নিয়ে কনসালট্যান্সি করছি। পারিবারিক ফার্ম দেখাশোনা করতে হচ্ছে। পরিবার সামলানোতো আছেই। এসব নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। এত ব্যস্ততার মধ্যে সময় করা যেতে পারে, কিন্তু আমার কাছে ভালো পাণ্ডুলিপি ও চরিত্র আসতে হবে। চরিত্রের ব্যাপ্তি নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমার চিন্তা হচ্ছে, যে চরিত্রটি আমি করব, তা কেন করব। অনেক বছর অভিনয় করেছি। যে চরিত্রগুলো করে এসেছি, সেগুলোর রিপিটিশন চাই না। আমি চাই আমার কাছে একটু এক্সপেরিমেন্টাল চরিত্র আসুক। এ ধরনের চরিত্র না করলে আমি বুঝতে পারি না অভিনয়ে উন্নতি করছি, কী করছি না। একই রকম অভিনয় করে যাওয়া খুব সহজ। আমি তো সহজ রাস্তায় বেশি দিন চলতে পারি না। এটা আমার ব্যর্থতা। আমি সবসময় কঠিন রাস্তায়ই চলতে পছন্দ করি। প্রতিবছরই আমার কাছে চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব আসে। বিনয়ের সঙ্গে তা না করছি। স্ক্রিপ্ট শুনে আর কাজে মন টানে না। আমার কাছে মনে হয়েছে অভিনয়ে যে বিরতি আছে, সেটা থাক না।

অভিনয়শিল্পী সংঘের নতুন কমিটি হয়েছে। নতুন কমিটির কাছে সংঘের সদস্য হিসেবে প্রত্যাশা কী?
সম্প্রতি দেখছি শিল্পীদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। সে দোষী কিনা, তা আগে প্রমাণ করতে দিতে হবে। এর আগেই তাঁকে মানসিকভাবে মেরে ফেলা ঠিক না। ইচ্ছা হলো একজন শিল্পীকে টেনে নিচে নামাল! তা ঠিক নয়। রাতারাতি একজন দুর্নীতি করে ধনী হয়ে যেতে পারে, কিন্তু একজন শিল্পী রাতারাতি তৈরি হতে পারে না। একজন শিল্পীর সম্মান খুব জরুরি। আমি আশা করব নতুন কমিটি শিল্পীদের সম্মান রক্ষা করবে।

উপস্থাপনায় কি আবার দেখা যাবে?
উপস্থাপনার প্রতি এক ধরনের ভালো লাগা আছে। ভ্রমণবিষয়ক আয়োজন হলে যে কোনো সময় কাজ করার জন্য আমি প্রস্তুত। অন্য ধরনের অনুষ্ঠান হলেও আপত্তি নেই। তবে তা মানসম্পন্ন হতে হবে।