রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের এক বছর পরও শুরু হয়নি বাস্তবায়নের কাজ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুর মেডিকেল কলেজকে (রমেক) একটি আধুনিক, যুগোপযোগী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব অনুমোদনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ সংক্রান্ত ফাইলটি
লাল ফিতায়বন্দি আছে। অথচ রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে চিকিৎসা শাস্ত্র ও সেবার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে।
গত সরকারের আমলে দেশে ৩টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শুধুমাত্র রংপুরে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব আর বৈষম্যনীতির কারণে অনুমোদিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেবল রংপুরবাসীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে
বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নয়নে এগিয়ে যাবে রংপুর অঞ্চল, এমনটাই দাবি শহীদ আবু সাঈদের বিভাগের মানুষদের। মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নে দ্রুত কাজ শুরু করতে ইউনূস সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
রংপুরের সুশীল সমাজ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ এপ্রিল রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের চিঠি পায় রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পৌঁছায়। কিন্তু এরপর অজ্ঞাত কারণে থমকে যায় বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের কাজ।
জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজ ১৯৭০ এ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি রংপুর নগরীর ধাপ এলাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের বিপরীতে অবস্থিত। মূল ক্যাম্পাস এবং হাসপাতালের আয়তন প্রায় ৬৫ একর। আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে ১৯৬৬ সালে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
১৯৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন প্রথম ব্যাচে শিক্ষার্থী ছিল ৫০ জন। ১৯৭৬ সালের ১৯ মার্চ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে ১ হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেডিকেল কলেজে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা সিট বরাদ্দ রয়েছে।
সুধীজনদের মতে, রংপুর মেডিকেল কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হলে পিএসসিসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য ডিগ্রির সার্টিফিকেট এখান থেকেই পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, রংপুর বিভাগের মানুষেরা স্বল্প মূল্যে ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। দেশের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা ও গবেষণা করতে পারবেন।
সেই সঙ্গে রংপুর বিভাগের মানুষের রোগব্যাধিসহ নানা বিষয়ে গবেষণা করা সম্ভব হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এখানে গবেষণা করতে পারবেন। স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন রোগীরা। এতে রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে।
সমাজকর্মী কামরুল হাসান বলেন, রংপুর বিভাগীয় নগরী। এখান জেলা শহরের বাইরেও অন্যান্য জেলা ও উপজেলা থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে রংপুরের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। এখানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলে রংপুর অনন্য উচ্চতায় যাবে। এই বিভাগের মানুষের মেডিকেল শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে।
শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার গত নয় মাসে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে বরাদ্দসহ একনেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। আমরা মনে করি, রংপুরের প্রতি সুনজর দেয়া দরকার। পাঁচ আগস্ট পরবর্তী অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে এই অঞ্চলের মানুষের অনেক বেশি প্রত্যাশা। এখন যদি বর্তমান সরকার রংপুরের প্রতি সুনজর দেয় তাহলে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, গত সরকারের আমলে স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিরা উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু ফিতা কাটার মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। একারণে বর্তমান ছাত্র-জনতার সরকারকে ঘিরে রংপুরের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে। বর্তমান সরকার প্রধান রংপুরকে এক নম্বরে দেখতে চেয়েছেন। আমরা মনে করি, রংপুর বিভাগের মানুষকে চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবায় এগিয়ে নিতে সরকার দ্রুত রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ব্যস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন যেন আর ফাইলবন্দি হয়ে না থাকে, সেটা আমরা চাই।
রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ব্যস্তবায়ন হয়ে গেছে। সেখানে জনবল নিয়োগসহ শিক্ষা ও সেবা কার্যক্রম চলছে। অথচ রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন আটকে আছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছে কাজ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এ কথার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না।