
ডেস্ক রিপোর্ট:
কাশ্মীরে হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এসব হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৪৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
ভারতের চালানো এ হামলার কোডনেম বা সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারত বলছে, গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে চালানো হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় বাহিনী জানিয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে তারা পাকিস্তান এবং পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে মোট ৯টি স্থানে ‘সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোয়’ হামলা চালিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এ হামলায় মূলত নিশানা করা হয়েছে জয়শ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়্যবাকে, যারা কাশ্মীরে সক্রিয় এবং অঞ্চলটি পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত করতে চায়। ভারতের সেনাবাহিনী আলাদাভাবে জানিয়েছে, ‘কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়নি’ এবং হামলার লক্ষ্য নির্বাচন ও হামলার পদ্ধতিতে ‘অনেক সংযম দেখানো হয়েছে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানায়, অভিযান ‘সিঁদুর’ পাকিস্তানের উদ্দেশে একটি ‘বার্তা’। সিঁদুর হলো হিন্দু বিবাহিত নারীদের সিঁথিতে ব্যবহার করা একধরনের লাল চিহ্ন।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামকরণের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি তাদের অটল প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটি পেহেলগামে হামলায় নিহতদের রক্তের প্রতিশোধ এবং জাতির সম্মান রক্ষার প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতীয় নারীদের সিঁদুর মুছে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতেই এ নামকরণ করা হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘সিঁদুর’ নামটি শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানই নয়, বরং জাতীয় গর্ব ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও কাজ করছে। এ ছাড়া ‘সিঁদুর’ শব্দটি সিন্ধু নদীর সঙ্গেও সাংস্কৃতিকভাবে সম্পৃক্ত। সিন্ধু নদী ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কিছুদিন ধরেই পারমাণবিক ক্ষমতাধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছিল, এখন তা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মতো অবস্থায় গড়িয়েছে। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে।
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৪৫ জন আহত হওয়ার কথাও জানান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
এদিকে ভারত সরকারের এক বিবৃতির বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
যদিও ভারত সরকারের দাবি, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে এ অভিযানে নিশানা করা হয়নি। ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলায় তিনজন হয়েছেন বলে ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর থেকে ভারত–পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে এবার যুদ্ধে জড়াল দেশ দুটি।