যুবলীগ নেতার যোগসাজশে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি

প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তেলবোঝাই দুটি ট্রাকে ডাকাতি করা চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি)। পুলিশের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ডাকাতি করে আসছিল।
গত মাসে ঢাকার ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে দুটি ট্রাক ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে তাদের গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অন্যতম একজন বেল্লাল চাকলাদার (৪৫)। তিনি রাজধানীর মতিঝিল ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য এবং বরিশালের মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার। তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- মো. মঞ্জু (৪০), সাইফুল ইসলাম (৪০), মো. রাসেল (২৮), মো. জাহিদ (২৪), মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৩), মো. হিরা শেখ (৩৫), মো. রফিক (৩৫), মো. বাধন (৩০), চাঁন মিয়া (৫৪) ও আসলাম খাঁন (৪৫)। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা নোহা গাড়ি, একাধিক বাটন ফোন ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়।

 

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার(ডিসি) মো. মাসুদ আলম।

ডিসি মাসুদ বলেন, আব্দুল কাদের নামে এক ট্রাক ব্যবসায়ীর চারটি ট্রাক রয়েছে। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার ট্রাক ড্রাইভার মো. নয়ন ও হেলপার মো. জামিরুল ইসলাম পাম অয়েল বোঝাই ৬০টি ড্রাম একটি ট্রাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে রওনা করে। গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে ধানমন্ডি থানার মিরপুর রোডের হোটেল আড্ডার সামনে ৭ থেকে ৮ জনের একটি দল দুটি মাইক্রোবাসে করে সেখানে উপস্থিত হয়। তারা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সিগন্যাল দিয়ে ট্রাকটি আটকায়। এদের দুজন লেজার লাইট ও ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়। একপর্যায়ে তারা পিস্তল ঠেকিয়ে ড্রাইভার-হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে হাত-চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় ট্রাক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের গত ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন। এর ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে একই সড়কের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেটের সামনে একই কায়দায় আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

পরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে ডিসি মাসুদ বলেন, সেদিন ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল বোঝাই একটি ট্রাক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে নিয়ে যায়। যে ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়। মামলা তদন্তকালে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, রাসেল ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সর্বশেষ গতকাল রোববার ডাকাতির মূলহোতা জাকির প্রকাশ তৌহিদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একইদিন কেরানীগঞ্জ, মহাখালী, মুন্সিগঞ্জ, শনির আখড়া থেকে ইসমাইল হোসেন, হিরা শেখ, রফিক, বাধন, চাঁন মিয়া, বেল্লাল চাকলাদার ও আসলাম খাঁনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসলাম খাঁনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জের বিসিক এলাকার গোডাউন থেকে ১০টি তেলভর্তি ড্রাম ও ৩৬টি খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য উল্লেখ করে রমনার উপকমিশনার মাসুদ বলেন, তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। মূলহোতা জাকির প্রকাশ তৌহিদের বিরুদ্ধে ১০টি, জাহিদের বিরুদ্ধে ৮টি, হিরা শেখ ও রফিকের বিরুদ্ধে ৬টি, মঞ্জুর বিরুদ্ধে পাঁচটি, চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি ও বেল্লাল চাকলাদারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেলাল চাকলাদার মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বেলাল চাকলাদার ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক ছদ্মবেশে ছিনতাই-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। যুবলীগ নেতা বেলাল চাকলাদার বরিশালের মুলাদী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়ার পর ঢাকার মতিঝিলে বসবাস করতেন। একপর্যায়ে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য পদ পান। এরপর তার বিরুদ্ধে ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও ডাকাতির অভিযোগ উঠে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেলাল চাকলাদার গাঁ ঢাকা দেন। পরে ডাকাতির একটি চক্র তৈরি করেন। সম্প্রতি ৬টি ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিসি মাসুদ আরও জানান, তাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়, ডাকাতির আগে নির্দিষ্ট জায়গায় একত্রিত হতেন। ডাকাতির সময় সাধারণত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, এরপর সিমসহ ফোন ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতেন।