
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন দেওয়ায় দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সিঙ্গাইর বাসস্ট্যান্ড এলাকার সিঙ্গাইর ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। তবে সূত্রের দাবি, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা আপস মীমাংসা করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সিঙ্গাইর এলাকার মাজেদুল ইসলামের স্ত্রী ও শায়েস্তা ইউনিয়নের চর লক্ষ্মীপুর এলাকার মো. ফিরোজের স্ত্রী প্রসব বেদনা নিয়ে শুক্রবার সিঙ্গাইর ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার বিকেলে মানিকগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি ডাক্তার শামিমা রহমান চারজন নারীর সিজার করেন। এদের মধ্যে মাজেদুলের স্ত্রী ও ফিরোজ আলমের স্ত্রীর পুত্র সন্তান হয়। এদের মধ্যে মাজেদুল ইসলামের শিশুপুত্রকে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ থাকা ২৫০ মিলির টেজিড ইনজেকশন পুশ করেন ডাক্তার। এতে নবজাতকের হার্টবিট কমে যায়। শুক্রবার রাতেই ওই শিশুকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। শিশুটি ঢাকায় নেওয়ার পথেই মারা যান। ফিরোজ আলমের শিশুপুত্রকে গতকাল শনিবার সকালে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ থাকা ২৫০ মিলির টেজিড ইনজেকশন পুশ করা হয়। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে ওই শিশুটিও মারা যায়। টেজিড নামে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন পুশ করায় নবজাতক দুটির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি নিহতের পরিবারের।
নিহত নবজাতকের বাবা মো. ফিরোজ আলম বলেন, শুক্রবার বিকেলে ডাক্তার শামিমা রহমান তার স্ত্রীকে অস্ত্রোপচার করে। এতে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তার সন্তান সুস্থ ছিল। গতকাল শনিবার সকালে তার ছেলেকে একজন নার্স মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার এক ঘণ্টার মধ্যে তার ছেলের মৃত্যু হয়।
মো. মাজেদুল ইসলাম নামে আরেক নবজাতকের বাবা বলেন, জন্মের পর আমার ছেলে সুস্থ ছিল। আমাদের সামনে নার্সরা একটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন দেওয়ার ছেলের হার্টবিট কমে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল থেকে দ্রুত তার ছেলেকে শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাতেই ঢাকার শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার সন্তানের মৃত্যু হয়। তার সন্তানের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি, এটি একটি হত্যার ঘটনা।
সিঙ্গাইর ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মোস্তাক আহমেদ বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো ইনজেকশন নবজাতকের শরীরে দেওয়া হয়নি। শুক্রবার তার ক্লিনিকে চার নারীর সিজার হয়েছে। এর মধ্যে মাজেদুলের ছেলে জন্মের সময় কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তারের পরামর্শে ওই নবজাতককে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিলো। এছাড়া শনিবার সকালে ফিরোজ আলমের ছেলের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ডাক্তারের পরামর্শে ওই নবজাতককে ইনজেকশন দেওয়া হয়। তবে সেটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল না। দুটি নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় তাদের পরিবারের ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক। তারা নানা ধরনের কথাবার্তা বলতে পরেন। শনিবার বিকেল ওই পরিবার দুটির সঙ্গে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। এতে ওই পরিবার দুটির কোনো অভিযোগ নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাফছান রেজা বলেন, বিষয়টি লোক মারফত শুনতে পেরেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নবজাতক দুটির মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালে কোনো গাফলতি আছে কি না, তা তদন্ত করা হবে।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে.ও.এম তৌফিক আজম বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশনে নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালটিতে পুলিশ পাঠানো হয়। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্তে আপত্তি থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দুটো দাফান করা হয়েছে। শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত নিহতের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।