
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার ১২ মাইল এলাকায় মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের এস আর এলপিজি স্টেশনে সিলিন্ডারে অবৈধ রিফিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গাড়ির জ্বালানি লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ফিলিং স্টেশনে অবৈধভাবে রিফিল করা হচ্ছে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার। যে কোন মুহূর্তে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ১২ মাইল এলাকায় অবস্থিত মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের এস আর এলপিজি স্টেশন। মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের এস আর এলপিজি স্টেশন প্রতিনিয়ত বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারে অবৈধভাবে ক্রস ফিলিং করে থাকে। নির্ধারিত বাজার মূল্যর চেয়ে সিলিন্ডারে কম টাকায় রিফিল পাওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা দেদারসে ফিলিং স্টেশন থেকে সিলিন্ডার রিফিল করেছে। সারাদিন গ্যাসের সিলিন্ডার হাতে নিয়ে বিভিন্ন মানুষ আসছে গ্যাস ক্রস ফিলিং করতে। গ্যাস ক্রস ফিলিং করে নিয়ে যাচ্ছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজিতে ৭০ শতাংশ কোপেন ও ৩০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ থাকে। আর গাড়িতে ৬০ শতাংশ কোপেন ও ৪০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ করে ব্যবহার করতে কোপেন ও ডিউটেন সংমিশ্রণের পার্থক্য থাকায় এলপিজি গ্যাস কোনোভাবেই রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু না জেনে না বুঝে এলপিজি স্টেশনগুলো রান্নার সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করে দিচ্ছে। আর এসব সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে রান্নার কাজে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ গ্যাস তৈল জাতীয়। রিফিল সংমিশ্রণ সঠিকভাবে না হলে গ্যাস সিলিন্ডারের নিচে বসে থাকে। নাড়াচাড়ার কারণে বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্থানীয়রা বলেন, মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনে এস আর এলপিজি স্টেশনে প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করা হচ্ছে। অটোরিকশা ও মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহণযোগে খালি সিলিন্ডার এনে রিফিল শেষে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্য থেকে দাম কম রাখায় দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা।
ভেড়ামারার সিলিন্ডার ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বলেন, এলপিজি স্টেশনে সিলিন্ডার রিফিল করার কারণে আমাদের বিক্রি আগের থেকে অনেক কমে গেছে। কারণ এলপিজি স্টেশনে রিফিল করা সিলিন্ডার বাজার মূল্যর চেয়ে ২ থেকে ৩ শত টাকা কমে বিক্রি করছে। এতে সাধারণ মানুষ রিফিলে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে গ্যাস নিচ্ছেন। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই।
মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনে এস আর এলপিজি স্টেশন এর মালিক বাবু মিয়া বলেন, এ বিষয়ে এসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেন। এর বেশিকিছু বলার নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলিন্ডার ব্যবসায়ী বলেন, এলপিজি স্টেশন থেকে বাসা বাড়ির সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা সম্পূর্ণ নিষেধ। এলপিজি স্টেশন থেকে বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন সময় অঘটন ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ গেজেট সুত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত, জুলাই ১২, ২০০৪ এর ১০৮ এ বলা হয়েছে, বহনযোগ্য পাত্রে এলপিজি ভর্তি করনে বিধি-নিষেধ। স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের জ্বালানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত এলপিজি বিতরণ স্টেশন হইতে মোটর জানে বা অন্য কোন স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত জ্বালানি ধারণপাত্র ব্যাতীত অন্য কোন বহনযোগ্য পাত্রে এলপিজি ভর্তি করা যাইবে না। বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত জুলাই ১২, ২০০৪ এর ১২৫ এর (ক) তে বলা হয়, বিধি ১১১ এর বিধান লংঘনক্রমে বিনা লাইসেন্সে বা বিধিমালায় কোন বিধান বা লাইসেন্সের কোন শর্ত লঙ্ঘনক্রমে সিলিন্ডারে এলপিজি ভর্তি করিলে তিনি নূন্য দুই বত্সর কিন্তু অনধিক ৫ বত্সর কারাদন্ডে এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থ দন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন; এবং উক্ত অর্থদন্ড অনাদায়ী থাকিলে অতিরিক্ত অনধিক ৬ মাস কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবে।
কুষ্টিয়া জেলার পেট্রোবাংলা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তপন বলেন, কোনো এলপিজি স্টেশন থেকে বাসা বাড়ি রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাস রিপিল করার নিয়ম নেই।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, রান্নার জন্য সিলিন্ডারের গ্যাস আর গাড়ির জন্য ব্যবহার করা গ্যাস এক জিনিস নয়। কোনো সিএনজি স্টেশন যদি এই কাজ করে থাকে তাহলে এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।