ভারতের প্রাচীন যে মসজিদে নেই কোনো মিনার ও গম্বুজ

প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর যুগেই ভারতে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি নির্মিত হয়েছে ভারতের কেরালার কোডুঙ্গাল্লুর অঞ্চলে। মসজিদটি বেশ কয়েকটি পুনর্নিমাণ করা হয়েছে । তবে এখন এর আসল চেহারা পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি চলছে।ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রচারে মসজিদটির বেশ সুনাম রয়েছে। এর নামেও রয়েছে সম্প্রীতির বার্তা। মসজিদির নামকরণ করা হয়েছে তৎকালীন বিখ্যাত রাজা চেরামন পেরুমলের নামে ।

পেরুমল মূলত দক্ষিণ ভারতের চেরা রাজবংশের শাসকদের রাজ-উপাধি চেরামন। রাজা চেরামন পেরুমল পাক-ভারত উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী ব্যক্তিও নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে তিনি একজন সাহাবা, তিনি ভারত থেকে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা.-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ১৭ দিন অবস্থান করেন। তাঁর আদেশে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।

ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রচারে মসজিদটির বেশ সুনাম রয়েছে। এর নামেও রয়েছে সম্প্রীতির বার্তা। মসজিদির নামকরণ করা হয়েছে তৎকালীন বিখ্যাত রাজা চেরামন পেরুমলের নামে ।

পেরুমল মূলত দক্ষিণ ভারতের চেরা রাজবংশের শাসকদের রাজ-উপাধি চেরামন। রাজা চেরামন পেরুমল পাক-ভারত উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী ব্যক্তিও নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে তিনি একজন সাহাবা, তিনি ভারত থেকে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা.-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ১৭ দিন অবস্থান করেন। তাঁর আদেশে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।

ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর আগমের আগে থেকেই মালাবারের সাথে আরবদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। হাজার বছর আগে সমুদ্র পথে মশলা ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র মালাবারে আসেন আরব ব্যবসায়ীরা।

এই এলাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ভারত সরকার প্রাচীন মোজেরি বন্দর নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে।

২০১৬ সালে কেরালা পর্যটন বিভাগ এই ঐতিহাসিক উপকূলীয় অঞ্চলে পুনরুদ্ধারের জন্য মোজেরি হেরিটেজ প্রকল্প চালুর সময় সেখানে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে একটি ছিল চেরামন মসজিদ।

এই মসজিদের গুরুত্ব এই ঘটনা থেকেও অনুমান করা যায় যে, ২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন সৌদি আরব সফর করেছিলেন, তখন তিনি সৌদি বাদশাহ সালমানকে এই মসজিদের একটি সোনার মডেল উপহার দিয়েছিলেন।কথিত আছে যে, মসজিদে নববী নির্মাণের মাত্র সাত বছর পর, মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায় রাজা চেরামন পেরুমলের নির্দেশে ৬২৯ সালে সাহাবি মালিক বিন দিনার (রা.) মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

কেরালার সবুজ এবং সুন্দর একটি গ্রামে চেরামন মসজিদ অবস্থিত । সমুদ্র উপকূলে অবস্থানের কারণে, এর জলবায়ু সতেজ। কেরালার অন্যান্য অঞ্চলের মতো এই গ্রামের সাক্ষরতার হার ৯৫%।

এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, খোদা এই গ্রামকে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েই ধন্য করেননি, বরং এটিকে ধর্মীয় সম্প্রীতির কেন্দ্রও করে তুলেছেন।

মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাদুঘরের দায়িত্বশীল ভিএম সারাফ বলেন, মসজিদের যে অংশগুলি পরে নির্মিত হয়েছিল সেগুলি ভেঙে ফেলা হবে, তবে পুরাতন ভবনের ক্ষতি না করার বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে।ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তার জন্য খ্যাতি রয়েছে চেরামন পেরুমল মসজিদের। চেরামন মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ড. মুহাম্মদ সাঈদ হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং খ্রিস্টানরা এই মসজিদের প্রতি মুসলমানদের মতোই সমান ভক্তি পোষণ করে।

তিনি বলেন, আমরা এই মসজিদে সবাইকে স্বাগত জানাই। অমুসলিম শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ শুরু করার সময় এই মসজিদের ইমামের কাছে আসে। শিক্ষার জগতে পা রাখার আগে তারা মসজিদের ইমামের কাছে প্রথম সবক নেয়। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় বিদ্যা রম্ভাম।

তার মতে, এই অঞ্চলের মানুষেরা বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমে বড়দের দোয়া ও সুনজর থাকবে তাদের সন্তানদের উপর। তিনি বলেন, আমরা তাদের সকলকে স্বাগত জানানোকে আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।

তিনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে সাধারণত, প্রতিটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের উপাসনালয়গুলো সেই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মন্দিরগুলো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়, মসজিদগুলো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এবং গির্জাগুলো খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থিত।

‘কিন্তু চেরামন মসজিদ এই দিক থেকে আলাদা এবং অনন্য। যে গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত, সেখানে মুসলমানদের জনসংখ্যা পাঁচ শতাংশের বেশি নয়। ১৯৪০-এর দশকে এখানে মাত্র দুটি মুসলিম পরিবার বাস করত। এক পরিবারের প্রধান ছিলেন মসজিদের ইমাম এবং অন্য পরিবারের মুয়াজ্জিন।’

ডা. মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, চেরামন মসজিদ কেরালার ধর্মীয় সম্প্রীতির এক মহান প্রতীক।

হিন্দুরা শুধু মসজিদের আশেপাশে নয়, বরং দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানে বাস করে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ই মসজিদকে সম্মান করে এবং তাদের নিজস্ব উপায়ে তাদের প্রভুর উপাসনা করে। মসজিদের দরজা হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের জন্য উন্মুক্ত।

ড. সাঈদ বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. সবাইকে স্নেহ ও সম্মান করতেন। ঐহিত্য অনুযায়ী আমরাও সব ধর্ম ও সব শ্রেণীর মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অত্যন্ত সহনশীল। আমরা সেই ঐতিহ্য অনুসরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।