
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরর ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কর্মরত ১৭৪জন খনিশ্রমিকের চাকরি সাব কন্টাক্ট বাতিল করে বিসিএমসিএল-এর সঙ্গে অন্তর্ভূক্তিকরণ অথবা সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশসহ সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী খনি শ্রমিকরা।
রোববার (১৮ মে) সকাল ১১টার দিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির প্রধান ফটকের সামনে থেকে খনি এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাব কন্টাক্টের মাধ্যমে ভূগর্ভে কর্মরত ভুক্তভোগী খনিশ্রমিকরা।
মিছিল শেষে খনি গেটের সামনে আয়োজিত সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন শ্রমিকনেতা শহিবুল ইসলাম বাবু।
লিখিত বক্তব্যে শ্রমিকনেতা শহিবুল ইসলাম বাবু শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা কয়লাখনির অভিজ্ঞ শ্রমিক। ৫/৭ বছর থেকে খনিতে কর্মরত রয়েছি। আমাদের অন্য কোন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সও নেই। এদিকে জমিজমা, ক্ষেত খামার সবই খনির কারণে ভূমি অবনমনে জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন খনি যতদিন থাকবে, আমাদের চাকরিও ততদিন থাকবে। তাহলে আজ কেন আমাদের চাকরি থাকবে না বলে জানানো হচ্ছে। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪০০ফুট মাটির নিচে গিয়ে কাজ করি। চুক্তি অনুযায়ী কোন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে তার পরিবার আর্থিক ক্ষতি পূরণ পাবে। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ ৫ মাস থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিএসএমই কোন ক্ষতিপূরণ দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন কাজ করবো।
এসময় শ্রমিকরা জেএসএমই এর সাথে সাব কন্টাক্ট বাতিল করে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) এর সঙ্গে অন্তর্ভূক্তিকরণ অথবা চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে নিয়োগের দাবি জানান। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খনি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সঠিক কোন উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে আগামীতে কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়।
ভুক্তভোগী খনিশ্রমিকরা জানান, বড়পুকুরিয়া খনির কারণে তাদের বাড়িঘর, ফসলি জমি, কর্মসংস্থান সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ২০ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকরি দেয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু পরিবারে লোকজনকে চাকরি দেয়া হলেও বেশিরভাগই পরিবার কোন চাকরি পায়নি। যারা চাকরি পেয়েছেন তাদেরকে সাব কন্টাক্টর জেএসএমই এর সাথে চুক্তিবব্ধ করা হয়। আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে জেএসএমই এর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরিমধ্যে গত ৬ মে জেএসএমই ভূগর্ভস্থ শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির কোন দায় নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে ১৭৪জন খনি-শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সারা না দিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা তাদের জীবন ও কর্ম রক্ষার দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেছেন।
খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন এন্ড অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক বলেন, খনির মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম তাদের কাজের কিছু অংশ জেএসএমই কে সাব কন্টাক্ট দিয়েছে। তাদের কাজ ছিল ভূগর্ভে টানেল তৈরি করা। টানেল তৈরির ছয় মাসের মধ্যে শেষ হবে। ওই কাজ শেষ হলে চীনা ঠিকাদার সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের চীনা কর্মীরাও চলে যাবেন। এইসব শ্রমিকের কাজ যেহেতু শেষ, তাহলে তারা কিভাবে থাকবে। এরপরও খনির পক্ষ থেকে তাদেরকে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু তারা অভিজ্ঞ এবং খনি এলাকার সেহেতু আগামীতে নতুন কোন সুযোগ হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।