পাকিস্তানের বাদশাহী মসজিদ যেভাবে নির্মিত হয়েছে

প্রকাশিত: ১২:২৮ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত বাদশাহী মসজিদ। মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট আওরঙ্গজেব। এটি পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মসজিদ। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী, কাসাব্লাঙ্কার হুসাইন দ্বিতীয় মসজিদ এবং ইসলামাবাদের ফয়সাল মসজিদের পরেই এর অবস্থান। ফয়সাল মসজিদ নির্মাণের আগে একেই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসেবে গণ্য করা হতো। এর ভেতরে ১০ হাজার এবং বাহিরে আরও ১০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

১৬৭৩ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসেবে পরিচিত ছিল। এর চত্বর বিশ্বের অন্যান্য মসজিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। মসজিদের মিনারগুলো তাজমহলের মিনারগুলোর চেয়ে ১৩ ফুট ৯ ইঞ্চি বেশি উঁচু। বাদশাহী মসজিদ নির্মাণ করেন ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীর। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৭১ সালের মে মাসে এবং শেষ হয় ১৬৭৩ সালের এপ্রিল মাসে। সম্রাটের নির্দেশে মসজিদটি লাহোর কেল্লার একেবারে বিপরীতে নির্মিত হয়। তার আসা যাওয়ার সুবিধার্থে কেল্লায় একটি নতুন দরজা নির্মিত হয়। দরজাটির নাম ‘আলমগীরি দরওয়াজা’।

মহারাজা রঞ্জিত সিংহের শাসনামলে এই মসজিদটি খুবই অপব্যবহারের শিকার হয়। পুরো মসজিদকে ঘোড়ার আস্তাবল ও অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চারটি মিনারের গম্বুজে কামান বসানো হয়। ইংরেজ শাসনামলে শিখরা পরাজিত হলে মসজিদটি পুনরায় ইবাদতের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং অস্ত্রাগার কেল্লায় স্থানান্তর করা হয়।

তবে মুসলমানদের প্রতি সন্দেহ থাকার কারণে মসজিদের একটি বড় দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়, যাতে মুসলমানরা এটিকে দুর্গ হিসেবে ব্যবহার না করতে পারে।

১৮৫২ সাল থেকে মসজিদের সংস্কারকাজ শুরু হয় এবং পুনরায় নামাজ আদায় শুরু হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মসজিদের সংস্কার চলমান থাকে এবং এতে প্রায় ৫০ লাখ রুপি ব্যয় হয়। এ সময় মসজিদটি পুনরায় তার মূল রূপ ফিরে পায়।

২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয় ইসলামিক সম্মেলনের সময় ৩৯টি মুসলিম দেশের প্রধান এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন। ইমামতি করেন মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল কাদির আজাদ। মসজিদের প্রধান দরজার পাশে একটি ছোট জাদুঘরও রয়েছে, যেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা., হজরত আলী (রা.) এবং হজরত ফাতিমা (রা.)-এর স্মৃতি রয়েছে।

২০০০ সালে কিছু নতুন সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ আবার শুরু হয়। এতে সাদা মার্বেল পাথরের টাইলস বসানো হয় এবং ২০০৮ সালে চত্বরে লাল পাথরের টাইলস বসানো হয়। এই পাথরগুলো ভারতের রাজস্থান থেকে আনা হয়।

বাদশাহী মসজিদের নকশা তৈরি হয়েছে দিল্লির জামে মসজিদের আদলে, যাতে ইসলামী, ইরানি, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর মিশ্র প্রভাব রয়েছে।