নদীর তীরের মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন বিএনপি নেতা

প্রকাশিত: ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৫

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মেঘনা নদীর তীরের মাটি ট্রাকে ভরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৭ মে) সকাল ৮টায় সরেজমিনে শ্রমিকদের মাটি কাটতে দেখা যায়। শ্রমিকরা ইব্রাহিম সর্দারের মাটি কাটছেন বলে স্বীকার করেছেন।

মো. ইব্রাহিম সর্দার হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। প্রায় তিনি এসব মাটি ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করেন বলে জানা যায়। মাটি কাটায় নিয়োজিত শ্রমিক ও পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রলির চালক ইব্রাহিম সর্দারের জন্য মাটি কাটছেন বলে স্বীকার করেন। তারা বলেন, আমরা দিনমজুর হিসেবে কাজ করছি। ইব্রাহিম সর্দার আমাদের বলেছেন মাটি কাটতে। নদীর তীরের মাটি কাটলে নদী আরও দ্রুত ভেঙে যায়।

জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নসহ প্রায় সব ইউনিয়ন নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে। ভাঙনের কারণে মানুষের বসতভিটা এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা নদী ভাঙনরোধে কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধনও করেছেন। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।হরণী ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বংশের কয়েক পরিবার সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমরাও ভাঙনের তীরে চলে এসেছি। ভাঙন ঠেকানোরও কোনো উপায় নেই। অনেকেই আছে সাতবার আটবার নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়েছেন। কয়েকটি গ্রুপ আছে যারা ভেকু দিয়ে তীরের মাটি কেটে নিয়ে যায় আবার অবৈধ বালুর ব্যবসা করে। বালুর জন্য বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ বাড়িঘরে থাকতে পারে না। আগের সরকারের আমলেও হয়েছে, এখনও মাটি কাটা চলছে। কিছু বলতে আসলে উল্টো আমাদের হত্যার হুমকি দেয়।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মো. ইব্রাহিম সর্দার মাটি কাটার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গত ১৬ বছর বিএনপি করে আমি নির্যাতিত। আমাকে সবাই ভালো মানুষ হিসেবে চেনে। আমার নিজের দোকানভিটা ভরাট করার জন্য নিজের জায়গা থেকে মাটি কাটছি। মাটি কাটার জন্য নদী দ্রুত ভাঙে এটা সত্য। আমার দরকার তাই মাটি কাটছি। এছাড়া আমি কোনো অন্যায় অনিয়মের মধ্যে নাই।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি। ফলে তাদের বক্তব্য যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াছিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে হরণী ও চানন্দী ইউনিয়ন মূল হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সুবর্ণচর উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া আছে। তারাই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রসঙ্গত, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১ এর খসড়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটা, বালি উত্তোলন: বেআইনিভাবে সরকারি বা বেসরকারির ভূমি, নদীর পাড়, তলদেশ ইত্যাদি থেকে মাটি বা বালু উত্তোলন করলে (কোনো ক্ষতি হোক বা না হোক) অপরাধ হবে। এজন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।