তাহা হইলে পরিবর্তনটা কীসের জন্য হইল?

প্রকাশিত: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দাবি বহুল আলোচিত। কেহ কেহ এই বত্সরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাগিদ দিয়া যাইতেছেন। তবে এই কথাও সত্য যে, নির্বাচন না হইলেও অনেকের মনোভাব এখন এমন যে, তাহারা ক্ষমতায় চলিয়া আসিয়াছেন। অন্তত তাহাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে তাহারই প্রতিফলন দেখা যাইতেছে। বিশেষ করিয়া, স্থানীয় পর্যায়ে তথা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে যাহা ঘটিতেছে তাহা এক কথায় অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। স্কুল-কলেজ, বাজার-ঘাট, বাসস্ট্যান্ড হইতে শুরু করিয়া সর্বত্র দেদার চাঁদাবাজি চলিতেছে। চলিতেছে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। দোকানপাট, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ বন্ধ হইয়া গিয়াছে, এমনটিও বলা যায় না। যত্রতত্র মামলা দিয়া হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন তথা মামলাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি দিব্যি চলিতেছে। তৃণমূল পর্যায়ে ইহার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কী হইতেছে তাহা একবার গভীরভাবে চিন্তা করিয়া দেখা দরকার। কেননা ইহাতে স্থানীয় জনগণ ত্যক্তবিরক্ত হইয়া উঠিয়াছে। দিন শেষে ও শেষ পর্যন্ত ইহার দায়দায়িত্ব কিন্তু অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপরেই পড়িতেছে!

এই পরিপ্রেক্ষিতে কী করিয়া এই সমস্যার সমাধান করা যায় সেই সম্পর্কে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকেই ভাবিতে হইবে। বিশেষ করিয়া, এই ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এই জন্য কী করিতে হইবে তাহা আমরা বলিতে চাহি না। তবে যাহারা স্থানীয় পর্যায়ে বাড়াবাড়ি করিতেছে এবং ধরাকে সরা জ্ঞান করিতেছে, তাহারা যে দলেরই হউক না কেন এবং তাহারা যতই প্রভাবশালী হউক না কেন, তাহাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বিষয়টি উপদেষ্টামণ্ডলীরও দেখা দরকার এবং যাহাতে তাহাদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেই ব্যাপারে দেওয়া দরকার বিশেষ নির্দেশনা।

অতীতে যাহা হইতে ছিল সরকার পরিবর্তনের পর যদি তাহাই চলিতে থাকে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাহার চাইতে অধিক অপকর্ম সংঘটিত হয়, তাহা হইলে সাধারণ মানুষ যাইবে কোথায়? একশ্রেণির মাস্তান, চাঁদাবাজ ও দখলবাজের কারণে তাহারা আবার অতিষ্ঠ হইয়া পড়িতেছে। ইহাতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠিতেছে, তাহা হইলে পরিবর্তনটা কীসের জন্য হইল? পরিবর্তনটা ভালোর জন্যই করা হইয়াছে ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই; কিন্তু বাস্তবে সেই ভালোটা কোথায়? আজ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানই সবচাইতে জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। প্রত্যেক নাগরিক যাহাতে শঙ্কামুক্ত জীবন যাপন করিতে পারে, তাহাই সর্বাগ্রে নিশ্চিত করিতে হইবে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা আমলে নিতে হইবে। ইতিমধ্যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ৯ মাস অতিবাহিত হইয়াছে। এই সময়টা কম নহে।

অতএব, মফস্সল শহর বা গ্রামে-গঞ্জে কী ঘটিতেছে সেই ব্যাপারেও আমাদের খেয়াল রাখিতে হইবে। কেহ অন্যায়-অবিচার, চাঁদাবাজি বা মাস্তানির শিকার হইলে তত্ক্ষণাত্ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যাহাতে সাধারণ মানুষ বুঝিতে পারে যে, সরকারের পরিবর্তনটা আসলে তাহাদের ভালোর জন্যই হইয়াছে। আগে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমনকি স্পর্শকাতর বিভাগও প্রভাবশালীদের কথায় উঠবস করিত। এখন নব্য প্রভাবশালীদের হুকুমমতো তাহারা যেন না চলেন। বরং আইন ও নিয়মকানুনের মধ্যে থাকিয়া সকল নাগরিকের সহিত সমান ও পক্ষপাতহীন আচরণ করেন। ইহার ব্যত্যয় হইলে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারেরই বদনাম হইবে যাহা আমাদের নিকট মোটেই কাম্য নহে। তাই এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মহলের সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকা অত্যাবশ্যক।