কোহলিকে ঘষেমেজে নিখুঁত করেছিলেন যিনি

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক:

 

বিরাট কোহলির প্রতিভার ঝলক ছেলেবেলাতেই দেখা গিয়েছিল। সেজন্যই ২০০৮ সালে ১৮ বছর বয়সে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। তখন আরসিবির ড্রেসিংরুম রাহুল দ্রাবিড়, অনীল কুম্বলের মতো কিংবদন্তিদের পদচারণায় মুখর ছিল। কিন্তু টিনএজার কোহলির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিলেন মার্ক বাউচার। পাকা জহুরির চোখে প্রোটিয়া এ উইকেটকিপার–ব্যাটার কোহলিকে চিনে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কোহলির দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলো শোধরাতে তাঁকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজও করেন। সেই পুরোনো দিনের কথা আরসিবির পডকাস্ট ‘বোল্ড অ্যান্ড বিয়ন্ড’-এ নিজেই বর্ণনা করেছেন ভারতীয় এ সুপারস্টার।

পডকাস্টে বাউচারের বেশ প্রশংসা করেন কোহলি, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি, তাদের মধ্যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব মার্ক বাউচারের। তিনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ভারতীয় তরুণদের সাহায্য করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতেন। আমার ব্যাটিং পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে কী করতে হবে, সেসব তিনি আমাকে না জানিয়ে নিজে নিজেই পরিকল্পনা করেন। তিনি আমাকে নিয়ে নেটে গেলেন। সেখানে গিয়ে বললেন, তোমাকে শর্ট বলে কাজ করতে হবে। তুমি যদি পুল করতে না পারো, তাহলে কেউ তোমাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ দেবে না। এরপর তিনি নিজে টেনিস বল ছুড়ে আমাকে অনুশীলন করাতেন। আমার মনে আছে, চেন্নাই বা কলকাতায় আমরা একটা ম্যাচ খেলছিলাম, সেদিন তিনি বলেছিলেন, চার বছর পর আমি যখন ভারতে ধারাভাষ্য দিতে আসব, তখন যদি তোমাকে জাতীয় দলে না দেখি, তাহলে সেটা হবে নিজের প্রতি তোমার অবিচার। সেদিন আমার প্রতি তাঁর আত্মবিশ্বাস দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’

ওই বছরই শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে অভিষেক হয় কোহলির। চোটাক্রান্ত শচীন টেন্ডুলকারের জায়গায় ডাক পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিনি সুযোগ পান যুবরাজ সিং চোটে পড়লে। সে আসরে সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল ভারত। বাজে সে হারও কোহলির ক্যারিয়ারে ভূমিকা রেখেছিল, ‘সে দিন আমি ১৬ রান করে শহীদ আফ্রিদির বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলাম। বাজে সে হারের পর সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ভোর ৫টা পর্যন্ত শুয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনের ভেতরে শুধু ঘুরছিল, এক বছর পর ডাক পেলাম; কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারলাম না! নিজের সামর্থ্যের ওপর সে রাতে সন্দেহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।’

২০২১ সালে জাতীয় দল ও আরসিবির নেতৃত্ব ছাড়ার নেপথ্য কারণ নিয়েও কথা বলেন কোহলি। ‘আমি জাতীয় দলে ৮ বছর ও আরসিবিতে ৯ বছর নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি ব্যাট হাতে নামলেই সবাই ভাবত জিতিয়ে ফিরব। লাগাতার এ চাপ সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই দুটি দায়িত্বই ছেড়ে দেই।’ নেতৃত্বের চাপ ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কমিয়ে দিয়েছিল বলেও স্বীকার করেন। অধিনায়ক হিসেবে আইসিসি ট্রফি জেতার সবচেয়ে ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন কোহলি ২০১৯ বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডে সে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ৯ ম্যাচের মধ্যে ৭টি জিতে সবার উপরে ছিল ভারত। কিন্তু সেমিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তারা। ‘২০১৯ সেমিফাইনালে হারের ধাক্কা সামলানো কঠিন ছিল। কোনোভাবে দেশে ফিরে বাড়ির ভেতর লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল।’