হজের প্রচলিত কিছু পরিভাষা

প্রকাশিত: ৩:৫৮ অপরাহ্ণ, জুন ৩, ২০২৪

ইসলামিক ডেস্ক:

হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয় ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মোট ৫ দিন। এই দিনগুলোতে পালন করা ইবাদতগুলোর জন্য বেশ কিছু পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। এখানে তা তুলে ধরা হলো—

ইহরাম : ইহরামের অর্থ কোনো বস্তুকে হারাম করা। কোনো ব্যক্তি হজ, ওমরা বা উভয়টার নিয়তে যখন তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ওপর কিছু হালাল বিষয়ও হারাম হয়ে যায়। তাই একে ইহরাম বলা হয়।রূপক অর্থে ওই চাদরকেও ইহরাম বলা হয় যা ইহরাম অবস্থায় হাজিরা পরিধান করে থাকেন।

ইসতিলাম : হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেওয়া এবং হাতে স্পর্শ করাকে বলা হয়।অথবা হাজরে আসওয়াদ বা রোকনে ইয়ামানীকে শুধু হাতে স্পর্শ করাকে।
ইযতিবা : ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে বের করে বাম কাঁধে রাখা।

আফাকী : ওই ব্যক্তি যে মিকাতের সীমনার বাইরে থাকে। যেমন, যেমন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, মিসর, সিরিয়া, ইরাক, ইরানের বাসিন্দা।
আশহুরে হজ : হজের মাস অর্থাৎ, শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের অর্ধমাস।

আইয়ামে তাশরিক : ৯ ই জিলহজ থেকে ১৩ই জিলহজ পর্যন্ত যে সমস্ত দিনে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা হয়।

আইয়ামে নহর : ১০ ই জিলহজ থেকে ১২ ই জিলহজ পর্যন্ত যে সমস্ত দিয়ে কোরবানি জায়েজ।

ইফরাদ : শুধু হজের ইহরাম বেঁধে হজের আহকাম সমূহ আদায় করা।

বাতনে উরনা : আরাফাতের কাছে একটি জঙ্গলের নাম। যেখানে ওকুফ জায়েজ নয়, কেননা এটা আরাফাতের বাইরে অবস্থিত।

বাবুস সালাম : মক্কা মুয়াজ্জামায় মসজিদে হারামে একটি দরজার নাম। মসজিদে হারামে প্রথম প্রবেশের সময় এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করা উত্তম।

মদিনা মুনাওয়ারায মসজিদে নববীতে একই নামের আরেকটি দরজা আছে।

বাবে জিবরীল : এ দরজা দিয়ে জিবরাঈল আ. রাসূল সা.-এর কাছে হাজির হতেন। এই দরজা দিয়েই জান্নাতুল বাকিতে যাওয়া যায়।

তামাত্তু : হজের মাসে প্রথম ওমরা করা এরপর ওই বছর হজের ইহরাম বেঁধে হজ করা।

কিরান : একই সঙ্গে হজ ও ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে প্রথমে ওমরাহ ও পরে হজ করা। মাঝে ইহরাম না খোলা।

তাকবীর : আল্লাহু আকবার বলা।

তালবিয়া : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা… পাঠ করা।

তাহলিল : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ করা।

তানয়ীম : একটি স্থানের নাম। মক্কায় অবস্থানকালে এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধা হয়। এটা মক্কা থেকে তিন মাইল দূরে এবং হেরেমের সীমানার মধ্যে সবচেয়ে কাছে। এখানে একটি মসজিদ আছে। এটাকে মসজিদে আয়েশা বলা হয়।
জামরাত বা জামার : মীনায় তিনটি স্তম্ভ রয়েছে। এই স্তম্ভগুলোতে (শয়তানের উদ্দেশ্যে) কঙ্গর নিক্ষেপ করা হয়। এরমধ্যে মসজিদে খায়ফের কাছে পূর্বদিকে যেটি অবস্থিত তাকে বলা হয় জামরাতুল উলা, পরবর্তী স্তম্ভটিকে জামরাতুল কুবরা, জামরাতুল আকাবা এবং জামরাতুল উখরা বলা হয়।

জুহফা : মক্কা থেকে তিন মসজিল দূরে রাবেগ এর কাছে একটি স্থানের নাম। এটা সিরিয়া আগতদের মিকাত।

জান্নাতুল মুআল্লা : মক্কার ওই কবরস্থান যেখানে উম্মুল মুমিনীন হজরত খাদিজা রা. এবং রাসূল সা. পুত্র ও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম রা. শায়িত আছেন। হজরত হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.-এর কবর এখানে অবস্থিত।

তাওয়াফ : তাওয়াফ অর্থ প্রদক্ষিণ করা। কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করাকেই তাওয়াফ বলে।

যেখান থেকে শুরু সেখানে এলে এক চক্কর হয়। একটি তাওয়াফ সম্পন্ন হয় সাত চক্কর প্রদক্ষিণ করলে।
তাওয়াফে কুদুম : মক্কা শরিফ পৌঁছেই যে তাওয়াফ করা হয়, তাকে তাওয়াফে কুদুম বলে।

তাওয়াফে জিয়ারত : ১০ জিলহজ মিনায় কোরবানি দিয়ে বা ১১ অথবা ১২ তারিখে মিনা থেকে মক্কা শরিফে এসে যে তাওয়াফ করতে হয়, তাকে তাওয়াফে জিয়ারত বলে।

তাওয়াফে বিদা : হজের সব কাজ শেষ করে দেশে ফেরার বা মক্কা শরিফ ত্যাগ করার আগে যে তাওয়াফ করতে হয়, তাকে তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ বলে।

সাঈ : সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দ্রুতপদে অতিক্রম করাকে সাঈ বলে।

রমল : তাওয়াফের প্রথম তিন চক্কর পুরুষের জন্য একটু দ্রুত বীরদর্পে হাঁটা।

হলক : মাথার চুল কামানো।

মাকামে ইব্রাহিম : কাবা ঘরের পূর্ব দিকে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পদচিহ্নসংবলিত একটি পাথর কাচের বেড়ির মধ্যে রাখা আছে।

এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবা ঘর নির্মাণ করেছিলেন। এই রক্ষিত পাথরের আশপাশই মাকামে ইব্রাহিম নামে পরিচিত।
মুলতাজিম : পবিত্র কাবা ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একখণ্ড বেহেশতি পাথর লাগানো আছে। এখান থেকে কাবা ঘরের দরজা পর্যন্ত দেয়ালের অংশটিকে মুলতাজিম বলে।
রোকনে ইয়েমেনি : ইয়েমেনমুখী কাবা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণটি হলো রোকনে ইয়েমেনি। অনুরূপভাবে বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে ইরাক ও সিরিয়ার দিকের কোণকে যথাক্রমে রোকনে ইরাকি ও রোকনে শামি বলা হয়।

মিনা : এটি মক্কা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পাঁচ মাইল দূরের একটি প্রান্তর। এখানে সব হাজিকেই ৮ জিলহজ পৌঁছতে হয়। এখান থেকে ৯ জিলহজ আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। ৯ জিলহজ দিবাগত রাত ছাড়া ১৩ তারিখ পর্যন্ত হাজিদের এখানেই থাকতে হয়। শয়তানকে পাথর মারার জায়গাও এটি।

আরাফা : মক্কা থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১৪-১৫ মাইল দূরে পর্বতবেষ্টিত এক বালুকাময় প্রান্তরের নাম আরাফা। এখানেই ৯ জিলহজ জোহর নামাজের পর অবস্থান করার মাধ্যমেই হজের প্রধান কাজ সম্পন্ন করা হয়।

মুজদালিফা : মিনা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে, মিনা ও আরাফার মাঝখানের একটি জায়গার নাম মুজদালিফা। আরাফা থেকে ফিরে এখানে রাত যাপন করতে হয়।

জাবালে রহমত : এটি আরাফার মাঠের একটি পাহাড়। হজের সময় এরই সন্নিকটে অবস্থান করতে হয়। এর পাদদেশ থেকেই মহানবী (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন।

জামরা : মিনায় শয়তানকে পাথর মারার জন্য নির্ধারিত স্থান। এখানে হাজিদের নিয়মমতো শয়তানকে পাথর মারতে হয়।

রমি : রমি শব্দের অর্থ নিক্ষেপ করা। মিনায় শয়তানকে পাথর মারাকে রমি বলে।

দম : ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা বা হজ ও ওমরাহর কোনো ভুলের জন্য ক্ষতিপূরণস্বরূপ ছাগল, গরু বা উট জবাই করা।

হাদি : হারামের সীমার ভেতরে কোরবানি করার জন্য আনীত পশু।

মিকাত : পবিত্র মক্কায় প্রবেশের জন্য চতুর্দিকে সীমারেখা দেওয়া আছে। এদের মিকাত বলা হয়। হজ ও ওমরাহকারীদের এই স্থান অতিক্রম করার আগেই ইহরাম বাঁধতে হয়।

তানইম : হারামের সীমার বাইরের সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থান।

মসজিদে হারাম বা হারাম শরিফ : পবিত্র কাবা ঘরের চারপাশের বিশাল মসজিদকে বলা হয় হারাম বা হেরেম শরিফ।

মসজিদে কুবা : মদিনায় অবস্থিত ইসলামের প্রথম মসজিদ।

মসজিদে কিবলাতাইন : মদিনায় অবস্থিত দুই কিবলার মসজিদ।

মসজিদুল খাইফ : মিনার মসজিদ।

মসজিদে নামিরা : আরাফাতের ময়দানের বিশাল মসজিদের নাম ‘মসজিদে নামিরা’।

জান্নাতুল বাকি : মসজিদে নববীর পূর্ব পাশের মদিনার কবরস্থান।