স্কুল ছাত্রের সখের ঘটিতে রসের চাহিদা মিটছে পরিবার ও স্বজনের

প্রকাশিত: ১২:২৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২৫

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

তিন বছর আগের কথা। এক গাছি খেজুর গাছ পরিষ্কার করতে আসে হোসাইনদের গ্রামে। গাছের নীচে দাড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে তা দেখছে। ভালোলাগা থেকেই গাছির কাছ থেকে শিখে নায় রসের ঘটি লাগালো এরপর থেকে ৩ বছর ধরে নিজেদের দুইটি গাছে প্রতি বছর ঘটি দেয় হোসাইন। এতে তাদের পরিবারে খেজুরের রসের চাহিদা মিটছে। আত্মীয় স্বজনের বাসায় পাঠাচ্ছে। বন্ধুরাও রস ক্ষেতে আসে। বিক্রি করতে না চাইলেও অনেকে কিনে নেয়।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসাইনের বয়স ১৯ বছর। স্থানীয় সিঙ্গুলা ইসলামিয়া ডিগ্রি মাদরাসা থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। । বাবা নেই। দুই ভাই দুই বোন। মা, দাদা-দাদী চাচারা আছে। যৌথ পরিবারে বসবাস। সে

জানা যায়, শীত আসলেই দুইটি খেজুর গাছ পরিষ্কার করে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করে হোসাইন। প্রতিদিন বিকেলে দুটি গাছে ঘটি দেয়। সকালে ঘটি নামালে ৪ থেকে ৫ কেজি রস সংগ্রহ হয়। আর শীত বেশি পরলে ৫ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যায়। বছরে ৩ মাস রস সংগ্রহ করে। এই বছর একমাস ধরে রস সংগ্রহ করছে। আগামী দের থেকে দুই মাস রস সংগ্রহ করা যাবে বলে জানান। যৌথ বড় পরিবার তাদের। এছাড়াও আত্মীয় স্বজনরা রস নেয়। তাই রস বিক্রির তেমন তাগিদ নেই হোসাইনের।

তবে, অনেকে রস নীতে আগ্রহ প্রকাশ করায় মাঝে মধ্যে বিক্রি করে। লিটার প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এতে তার কিছু টাকা হাতে আসে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোসাইন তখন গাছে ঘটি বসাচ্ছে। দাদী সাজেদা বেগম নীচে দাড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, সে আমার বড় ছেলের নাতি। আমার নাতি তিন বছর ধরে এই দুইটা গাছে ঘটি দেয়। গাছ থেকে পাওয়া রস আমার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়ে খাই। একসময় অনেক রস পাওয়া যেতো। এখন তেমন নাই।

মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, তিন বছর আগে এক গাছি আমাকে একবার দেখাইয়া দেয়। তারপর থেকে আমি নিজেই গাছে ঘটি দেই। শীতকাল আসলেই খেজুরের রস নিয়ে আমাদের ভাবতে হয় না। দুটি গাছ থেকে সংগ্রহ হওয়া রস আমাদের পরিবারের চাহিদা মিটায়। আমার বন্ধুরা আসে তাদেরকে আমি রস দেই। আমি এতে আনন্দিত। আলহামদুলিল্লাহ আমার দুইটি গাছের রস অনেক মিষ্টি। ক্ষেতেও সুস্বাদু।

দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমার নাতি সখ করে গাছে ঘটি দিয়েছিলো। তার সখের ঘটি এখন আমাদের চাহিদা পূরণ করছে। খেজুরের রস আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য। এটা সংগ্রহ ব্যবস্থা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

ঐ ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা এআইপি (এগ্রিকালচার ইম্পরট্যান্ট পার্সন) মতিন সৈকত বলেন, একটা সময় ছিলো। শীতকাল আসলে গ্রামে ভিন্ন রকমের আমেজ বিরাজ করতো। খেজুরের রসের গুর তৈরি হতো। সেই গুর দিয়ে নানান রকম পিঠা বানানো হতো। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হতো। রসের সিন্নি তৈরি করা হতো। এখন তা নেই বললেই চলে। খেজুর গাছ থাকলেও রস সংগ্রহ করার গাছি নেই। তাই আমাদের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু এই খাবারটি বিলুপ্তির পথে।

তিনি আরও বলেন, হোসাইন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তার মতো গ্রামে গ্রামে রস সংগ্রহে আগ্রহী তরুণ থাকলে। রসের চাহিদা মিটতো এবং এই প্রজন্ম এর স্বাদ নিতে পারতো। ঐতিহ্য না হারিয়ে, বেঁচে থাকতো।