‘সে মানসিক রোগী, তাকে অস্ত্র দিলো কেন’

প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২৪

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

রাজধানীর কূটনীতিক এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হককে খুব কাছ থেকে গুলি করেন কনস্টেবল কাওসার আহমেদ। হত্যাকাণ্ডের পর কাওসার আহমেদকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেছেন তার পরিবার।

কাওসার আহমেদের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। তিনি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দাড়েরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলীর ছেলে।

কাওসার আহমেদ ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১০ সালের দিকে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হন। এ সময় কারও সঙ্গে বেশি কথা বলতেন না এবং অল্পেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন। চাকরি করা অবস্থায় এ ধরনের সমস্যার কারণে তাকে কয়েক দফা চিকিৎসাও করানো হয়। মানসিক সমস্যার কারণে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা কম বলতেন।
কাওসারের মা মাবিয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলে মানসিক রোগী। সেটা সবাই জানে। ডিপার্টমেন্টের লোকজন তা জানে। ডিপার্টমেন্ট থেকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাও করিয়েছে। সে মানসিক রোগী, তাকে অস্ত্র দিলো কেন। অস্ত্র দিলো তো এতো গুলি দিলো কেন। আমরা জানতাম, লাঠি নিয়ে ডিউটি করে কাওসার। আমার ছেলের মানসিক সমস্যার সার্টিফিকেট আছে। এর আগে সে ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল, ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করত। ডিউটি করার সময় অনেকবার অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। তখন তার ডিপার্টমেন্ট থেকেই তাকে চিকিৎসা করাতো। অনেক সময় অসুস্থতার কারণে বাড়িতে পাঠিয়ে দিত।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল, ঈদের ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছে। ঈদে বাড়িতে আসবে।
কাওসারের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথি বলেন, আমার স্বামী মানসিক রোগী। তার মাথায় যখন সমস্যা হতো তখন ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করত। ঘরে আগুন ধরিয়ে দিত, কাপড়চোপড় ছিড়ে ফেলত। আমাকে মারধর করত। খাট, জানালা, ড্রেসিং টেবিল এসব ভাঙচুর করত। মানসিক সমস্যা হওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে আমার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে তার ঢাকায় পোস্টিং হয়। সে গাজা, ইয়াবা খেত। বাড়িতে আসলেই মাদক সেবন করতে দেখতাম।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানতাম সে লাঠি হাতে নিয়ে ডিউটি করত। ডিপার্টমেন্টের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। বাড়িতে আসলে স্বামী বলতো যে, সে লাঠি হাতে ডিউটি করে। আমাদের বাড়ি থেকে সকল মেন্টাল চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন ও কাগজপত্র নিয়ে গেছে দৌলতপুর থানার ওসি। এ ছাড়া আমার ছেলের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে মোবাইল থেকে ওইসব কাগজপত্রের ছবি ডিলিট করে দিয়েছে পুলিশ। এখন আমরা কীভাবে প্রমাণ করব যে সে মানসিক রোগী ছিল। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতপুর থানার ওসিসহ ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ এসেছিল। তখন আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এ ছাড়া ঢাকায় আমার স্বামী যেখানে চাকরি করে সেখানে আমাদের না জানিয়েই তার বক্স খোলা হয়েছে।

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাওসারের বাসায় তাদের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম। তাদের কাছে থেকে কোনো কাগজপত্র আনা হয়নি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা। কাওসারের পরিবারের দাবি তিনি মানসিক রোগী।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত পৌনে ১২টায় বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল কাওসার আহমেদ তার সহকর্মী পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হককে খুব কাছ থেকে গুলি করেন। এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন গুরুতর আহত হন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ঘটনা ঘটার পর স্থানীয় নিরাপত্তা রক্ষীরা কাওসার আহমেদকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

এ ঘটনায় নিহত মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাওসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।