
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে আর আইনি জটিলতা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। এত দিন নিষিদ্ধ ঘোষণা না থাকায় অনেক সময় মাঠপর্যায়ে গ্রেপ্তার নিয়ে দোটানায় থাকতেন কর্মকর্তারা। এখন আর সে বাধা থাকছে না। সরকারি আদেশ কার্যকর হওয়ার পর থেকে পুলিশ চাইলে সমাবেশ-মিছিল বা গোপন বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করতে পারবে।
রোববার (১১ মে) পুলিশের একাধিক সূত্র ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা এসব তথ্য জানান।
জানা গেছে, সোমবারই (আজ) আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারি আদেশ জারি হতে যাচ্ছে। এরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হবে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কার্যক্রম ঢাকা রেঞ্জে চলতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে এসপিদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ ঘোষণা না হলেও আওয়ামী লীগ এখন কার্যত নিষিদ্ধ দলের তালিকায়। ফলে দলের পক্ষে কোনো মিছিল, সমাবেশ কিংবা গোপন বৈঠক হলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে। এমনকি দলের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট বা মন্তব্য করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাইবার অপরাধ দমন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ‘ফেসবুক-ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কেউ কিছু বললে, পোস্ট দিলে বা মন্তব্য করলে—এমনকি বিদেশে বসে করলেও—তাদের বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা যাবে। দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার হবে। এই আদেশ অমান্যকারীরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছেন বলে বিবেচিত হবেন।’
সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। সরকারের জারি করা আদেশ অনুযায়ী পুলিশ আইনগত বৈধতা পেয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পেনাল কোডের ১৮৮ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার কোনো আদেশ জারি করলে তা অমান্যকারীকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। এখন এই ধারা অনুযায়ী গ্রেপ্তার হবে।’
এদিকে, অনলাইনেও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি জানান, শুধু অফলাইনে নয়, সাইবার স্পেসেও দলটির উপস্থিতি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘পরিপত্র জারি হলেই বিটিআরসির মাধ্যমে মেটাসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চিঠি পাঠানো হবে। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার—সবখানেই দলটির কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।’
ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামের দলটির ভেরিফায়েড পেজে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। সেটিও নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল উড়োজাহাজ নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭–৮ ‘জাম্বো জেট’ উপহার হিসেবে গ্রহণের চিন্তা করছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি প্রেসিডেন্সির সময় ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং পরবর্তীতে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় স্থান পাবে।
রোববার (১১ মে) এবিসি নিউজ প্রথম এই খবর প্রকাশ করে। তারা উড়োজাহাজটিকে ‘উড়ন্ত প্রাসাদ’ বলে উল্লেখ করে জানিয়েছে, এটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপহার। ধারণা করা হচ্ছে, এর বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
তবে কাতার এ বিষয়টি ‘উপহার’ হিসেবে ব্যাখ্যার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে একটি সাময়িক ব্যবহারের চুক্তি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে কাতার দূতাবাসের মুখপাত্র আলি আল–আনসারি জানান, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় পদে থাকা কোনো কর্মকর্তা বিদেশি সরকার বা রাজপরিবারের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করতে পারেন না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প হয়তো এই বিধান পাশ কাটিয়ে উড়োজাহাজটি তার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে স্থানান্তরের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারেন, ফলে তা ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে না।
তবে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ঘটনা প্রমাণ করে ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় পদকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করছেন। শ্রমজীবী মানুষ যখন চরম অর্থনৈতিক চাপের মুখে, তখন তিনি ধনীদের সম্পদ বাড়ানোর চিন্তায় মগ্ন।’
ডানপন্থী রাজনীতিক লরা লুমার বিষয়টিকে আরও কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, ‘কাতারের মতো দেশ, যারা হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর অর্থ জোগান দেয়, তাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন উপহার গ্রহণ করা উচিত নয়।’
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস ও বিচার বিভাগ বিষয়টিকে ‘ঘুষ’ হিসেবে দেখছে না। তাদের যুক্তি, উড়োজাহাজটি কোনো প্রতিদানমূলক সুবিধার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে না, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর মালিকানায় যাবে এবং পরবর্তীতে সংগ্রহশালায় স্থান পাবে।
এএফপির অনুরোধেও হোয়াইট হাউস থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে ট্রাম্প কাতার ও আশেপাশের দেশগুলোতে যাচ্ছেন এবং সেখানে উড়োজাহাজ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন বলে জানিয়েছে এবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য উপহার গ্রহণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নৈতিকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নটি আবারও সামনে চলে এসেছে।