রান্নার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঝুঁকি এড়াতে যা করবেন

প্রকাশিত: ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

বাসাবাড়িতে রান্নায় এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়েছে অনেক, সঙ্গে বেড়েছে অগ্নিঝুঁকিও। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের কারণ এই গ্যাস সিলিন্ডার। সর্বশেষ বুধবার ঢাকার ধামরাই পৌরসভার মোকামটোলা এলাকায় ভোরে সেহরীর জন্য রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীনদের দগ্ধদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এর আগে ১৩ মার্চ গাজীপুর কালিয়াকৈর তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে ৩৬ জন দগ্ধ হন যাদের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাই এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারে থাকতে হবে সতর্ক।

ফায়ার সার্ভিস ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্যাস লিকেজের প্রধান কারণ ব্যবহারের অনুপযোগী ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার। এসব কারণে ঘটেছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এছাড়া কোনো ভবনে একবার গ্যাস জমে গেলে, তা বের না করলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২১ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ছয়টি বড় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তৎকালীন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম জানিয়েছিলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের বিপদ আরও বেড়ে যায় যদি বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা ভালো না হয় অথবা সিলিন্ডার ঘরের ভেতরে কোনো জায়গায় বসানো হয়। তিনি বলেন, আমরা এলপিজি সিলিন্ডারের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারি, তবে কারও বাড়ির ভেতরে গিয়ে সতর্ক করে আসা কঠিন। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয় তাহলে বিস্ফোরণের মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের অবহেলাও অন্যতম বড় একটি কারণ।

আবুল কালাম বলেন, বিস্ফোরক দপ্তর গ্যাস সিলিন্ডার ক্রেতাদের জন্য নিরাপত্তা নির্দেশিকাসহ একটি বই বের করেছে। কিন্তু সবাই নির্দেশনা অনুসরণ করছে কিনা সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। বাজারে নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডারগুলো লিক হওয়ার ঝুঁকি বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি আছে যারা গ্যাস সিলিন্ডার তৈরি করে, কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ রেগুলেটর, ভালভ, সংযোগকারী বা টিউবের কারণে সিলিন্ডার ফুটো হয়ে যায়। সেজন্য ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আরও সতর্ক হতে হবে।

তৎকালীন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) দেবাশিস বর্ধন বলেছিলেন, অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য বিক্রেতারা প্রায়ই ক্রেতাদের কাছে সস্তা ও ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন। যদি সিলিন্ডারে একটি ফুটোও থাকে এবং কেউ কিছু চালু করে যেমন, ফ্যান বা মশার র্যাকেট তখনও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

তিনি জানান, কিছু দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়, কারণ গ্যাস ছড়ালে গন্ধ পাওয়া যায়। সিলিন্ডারে লিক থাকলে মানুষ সহজেই গন্ধ পাবে। তখন ঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে যেন ঘরের ভেতর থেকে গ্যাস বেরিয়ে যায়।