রপ্তানি নীতিমালার খসড়া নীতিগত অনুমোদন

প্রকাশিত: ১২:০৮ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২৪

সেলিনা আক্তারঃ

রপ্তানির কিছু খাতে প্রণোদনার বিকল্প অন্য নীতিসহায়তা দেওয়ার বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে। ২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে রপ্তানিনীতি করতে যাচ্ছে, তাতে প্রণোদনা বাদ দিয়ে অন্যান্য নীতিসহায়তা চালুর বিষয়টি রাখা হয়েছে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানিনীতি (২০২৪-২০২৭)-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়।

মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই নীতি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন, নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের রপ্তানি খাতে সম্পৃক্ত করতে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে। এতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধান অনুসরণ করে রপ্তানিকারকদের আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প খুঁজতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময়ের শেষ বছরে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে রপ্তানিনীতিতে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন খাতগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে, কোনগুলো দেশের বাইরে ব্র্যান্ডিং করতে হবে, সেই বিষয়গুলো রপ্তানি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন খসড়াটা অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। পরবর্তীকালে মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের মাধ্যমে এটা পাশ হবে।

খসড়ানীতির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে— স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ, রপ্তানির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত রূপকল্প প্রণয়ন, রপ্তানি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের সহায়তা, পরিবেশবান্ধব ও বৃত্তাকার অর্থনীতির কৌশল প্রণয়ন। এতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া খাতের মধ্যে সবজি, হস্ত ও কারুপণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতে স্পিনিং ও ফেব্রিক্স মেনুফ্যাকচারিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিংকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওষুধশিল্প ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট, হস্তশিল্পকে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যতালিকা ও শর্তসাপেক্ষে রপ্তানি পণ্যের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত বৈঠকে টিসিবির খোলা বাজার থেকে পণ্য কেনার সুযোগ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যখন জরুরি প্রয়োজন হয়, তখন সরকার টিসিবির মাধ্যমে চাল, ডাল ও অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনাকাটা করে। এটা সরকারি ক্রয়কমিটির পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। জরুরি প্রয়োজনে যেন টিসিবি ক্রয়কমিটি এড়িয়ে সরাসরি পণ্য কিনতে পারে, সেই ধরনের একটা সুযোগ অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটি দিয়েছিল।

তবে সেই সুযোগ আগামী ২৬ মের পর শেষ হয়ে যাবে। এখন যে ১ কোটি পরিবারকে চাল ডাল তেল দিচ্ছে। ফলে পরবর্তী এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ৩০ জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত টিসিবি সরাসরি পণ্য কিনতে পারবে।

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের জন্য কানাডা, কাতার, সৌদি আরব এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টন সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে খরচ হবে ৬৩২ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া, ৪০ হাজার টন এমওপি এবং ৪০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে। সভায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ১০১ টাকা ৯৪ পয়সা। অন্য এক প্রস্তাবে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

করোনায় আক্রান্ত অর্থমন্ত্রী: ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এবং অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে তার করোনা পজিটিভের কারণে তিনি বৈঠকে উপস্থিত হননি। অর্থমন্ত্রী জুমে যুক্ত হয়ে বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন।