মেট্রোরেল নগরীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল

প্রকাশিত: ২:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪

মারুফ হাসান ভূঞা:

মেট্রোরেল ঢাকার জনজীবনে আশীর্বাদ হিসেবে প্রচারিত হলেও নগরীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। রাজধানীবাসীর প্রত্যাশা ছিল, মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর কম খরচে যানজটমুক্ত ও দ্রুত চলাচল করতে পারবে। সেই প্রত্যাশার উল্টো চিত্রের মুখোমুখি হলো নগরীর মানুষ। মেট্রোরেল আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন হয় গত বছরের ৪ নভেম্বর। বর্তমান বছরের শুরুর দিকে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত চালু হয়েছে।

উদ্বোধনের আগে প্রকাশ করা ভাড়ার তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। অর্থাৎ একজন যাত্রীকে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে গমন করতে হলে ২০ টাকা ব্যয় করতে হবে। এই ভাড়া রাজধানীতে চলাচল করা বাস ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ, যা মূলত রাজধানীর মানুষের জন্য ব্যয়বহুল। এই ভাড়া নিয়ে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

মতিঝিলের বাসিন্দা পোশাক শ্রমিক আরিফুর রহমান বলেন, ভেবেছিলাম মেট্রোরেলে এখন থেকে সময়মতো কারখানায় যেতে পারব। কিন্তু আমার দৈনন্দিন আয় ৪১৬ টাকা। নাশতা, খাওয়া, সংসার খরচ ও বাচ্চার স্কুল বাবদ চলে যায় ৪০০ টাকা। এর মধ্যে যাওয়া-আসার বাস ভাড়া ৩০ থেকে ৫০ টাকা। সেটাও ধার করতে হয়। মেট্রোরেলের ভাড়া তো বাসের চেয়েও বেশি। মেট্রোরেল আমাদের জন্য না; ধনীদের জন্য। অত টাকা দিয়ে আমরা চলাচল করতে পারব না। পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী লিয়াকত লিটন বলেন, রাজধানীতে এক মেসে থাকি। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা ও থাকা-খাওয়ার খরচ চালাই। দিনে পাঁচ-দশ টাকা বাঁচানোর জন্য অনেক সময় হেঁটেই ক্যাম্পাসে যাই। মেট্রোরেল চালু হওয়ার কথা শুনে ভেবেছিলাম, একটু রেহাই মিলবে। অন্তত ক্যাম্পাসে সময়মতো যেতে পারব। কিন্তু এর ভাড়া অনেক বেশি; শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা নেই।

মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারের ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এটি জনগণের ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা থেকেই পরিশোধ করা হবে। জনগণের একটি বড় অংশ শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত। অথচ তাদের সামর্থ্যের বাইরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের জন্যও হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। রাজধানীতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে মেসে থেকে টিউশনি করে পড়ালেখা করে। রাজধানীর এই যানজট উপেক্ষা করে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। মাঝেমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী যানজটের কারণে ক্লাস-পরীক্ষায় সময়মতো অংশগ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু মেট্রোরেলে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা নেই। সরকারি পরিষেবা যদি শিক্ষার্থী ও জনগণের হাতের নাগালে না রাখা হয়, তাহলে তারা কি বঞ্চিত হবে না?

শিক্ষার্থী, মিরপুর, ঢাকা