মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণায় মন্ত্রীর মেয়ে, স্থানীয় আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

প্রকাশিত: ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,গোপালগঞ্জঃ 

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ভোট গ্রহণ ২১ মে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী তরুণ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম রাজের পক্ষে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কানতারা কে. খান। তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের মেয়ে। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।

মুকসুদপুরে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ ঘরানার। আবুল কাশেম রাজ (দোয়াত-কলম) ছাড়া অপর প্রার্থীরা হলেন– সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাবির মিয়া (ঘোড়া), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএম মহিউদ্দিন আহমেদ (মোটরসাইকেল) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষিবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. কাইমুজ্জামান রানা (আনারস)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী মহিউদ্দিনের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। কিন্তু রাজের পক্ষে গণসংযোগে মন্ত্রীর মেয়ে অংশ নেওয়ায় দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এটাকে কোনো সমস্যাই মনে করছেন না। তবে কেউ কেউ বিষয়টিকে দলের ঐক্য বিনষ্টের কারণ হিসেবে দেখছেন। বিষয়টি নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে– এ নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ কষছেন বিশ্লেষকরা।

গত উপজেলা নির্বাচনে এমএম মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে সমর্থন দেয় মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. কাবির মিয়ার কাছে পরাজিত হন। ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে মুকসুদপুর উপজেলা গঠিত। উপজেলার মোট ভোটার ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৩১ জন পুরুষ ও নারী ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৮ জন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান গোপালগঞ্জ-১ আসন (মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার ৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত) থেকে ষষ্ঠ বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মুহাম্মদ ফারুক খানকে অভিভাবক মনে করেন। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে কৌশলগত কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্বজনদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নিদের্শনা রয়েছে। মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রত্যাশা ছিল চেয়ারম্যান পদে এবারও এমএম মহিউদ্দিন আহমেদকে মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান সমর্থন দেবেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি কাউকে সমর্থন দেননি।

মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খান্দারপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাব্বির খান বলেন, মুহাম্মদ ফারুক খান আমাদের অভিভাবক। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মুকসুদপুর আওয়ামী লীগ এমএম মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পারছি মন্ত্রীর মেয়ে কানতারা কে. খান অন্য এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। কিন্তু আমরা তা বিশ্বাস করতে চাই না। যদি এটি করে থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে দলের জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। এতে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হবেন।

মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম সিকদার বলেন, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় শতভাগ নেতাকর্মী এমএম মহিউদ্দিন আহমেদকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলে এবারও তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হতেন। কানতারা কে. খান যাকে নিয়ে প্রচারণা করছেন তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে নবাগত। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও অনৈক্যের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কানতারা কে. খান কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা এমন একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে চাই যিনি হবেন তারুণ্য ও সততার প্রতীক। যিনি তরুণদের নিয়ে চিন্তা করেন। এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবেন। যিনি যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকবেন। এলাকায় কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেবেন।’ দল নির্বাচন উন্মুক্ত করেছে। নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন। এখানে বিভক্তির কিছু দেখছেন না তিনি।