মা-মেয়েকে গণধর্ষণ : যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি হবিগঞ্জ 

২০২০ সালে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় একইসঙ্গে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিনকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।গতকাল শনিবার রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি দল নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ ভুইগড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন মিয়া হবিগঞ্জ চুনারুঘাটের জীবধরছড়ার হুছেন আলীর ছেলে।

রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে টিকাটুলিস্থ র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় বসবাস করতেন। গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন এবং মামলার অপর আসামি শাকিল ও হারুন একই এলাকায় বসবাস করতেন। গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন একসঙ্গেই শাকিল ও হারুনের সাথে দিন মজুরের কাজ করতেন এবং অধিকাংশ সময় একসঙ্গেই কাটাতেন।

ভুক্তভোগী পূর্ব পরিচিত পলাতক শাকিল অন্যান্যদের সঙ্গে শেয়ার করে যে, ভুক্তভোগী বিউটি ও তার মা আমেনা বেগম ছাড়া তাদের বাড়িতে অন্য কেউ থাকে না। বিউটি আক্তারের ছোট ভাই সবুর রেল কোম্পানিতে চাকরি করায় বাড়িটি ছিল পুরুষশূন্য। ভুক্তভোগী নির্জনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পূর্ব পরিচিত শাকিল গত ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাত ৮ টার সময় ভুক্তভোগীদের বাড়িতে এসে তাদের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকতে থাকে। পূর্ব পরিচিত শাকিলের ডাক শুনে ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসে আমেনা বেগম। বাইরে এসে তারা শাকিলের সঙ্গে আরও দুইজন অপরিচিত ব্যক্তি সালাউদ্দিন ও হারুনকে দেখতে পায়।

শাকিল জরুরি কথা আছে বলে ঘরের ভেতরে বসতে চায়। তখন শাকিলসহ তার সহযোগীদেরকে সরল বিশ্বাসে তাদের ঘরের মধ্যে বসতে দেয় আমেনা বেগম।

পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুক্ষণ পর শাকিল হঠাৎ তাদের ঘরে সৌর বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সালাউদ্দিন, শাকিল ও হারুন তিনজন মিলে ভুক্তভোগী বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির কারণে ভুক্তভোগীরা চিৎকার করতে শুরু করলে শাকিল তার হাতে থাকা দা দিয়ে তাদেরকে কেটে ফেলার ভয় দেখায় এবং বাইরে তাদের আরও অনেক লোক আছে বলে হুমকি দেয়।

মা ও মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং জোরপূর্বক পালাক্রমে দলবদ্ধভাবে গণধর্ষণ করে। জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।ভুক্তভোগী বিউটি বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় শাকিল, সালাউদ্দিন ও হারুনের নাম উল্লেখপূর্বক ২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর অভিযুক্ত সালাউদ্দিন ও শাকিল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কিশোর হারুন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়।

মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন ও পলাতক শাকিলের অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ঘটনার পর থেকেই সে এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে নাম পরিচয় আত্মগোপন করে অটো রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। রাজধানীতে ৪-৫ মাস থাকার পর সে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন ভুইগড় এলাকায় চলে যায়। সেখানেও সালাউদ্দিন অটো চালাতেন। অটো চালানোর পাশাপাশি সে অটোর ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।