মাগুরা থেকে মেহেরপুর, ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে কবে?

প্রকাশিত: ১২:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০০০ সালের দিকে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ’-এর কিছু শিক্ষার্থীর সাথে আমার পরিচয় হয় যারা তাদের ক্যাম্পাসে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে ‘অশুচি’ নামে একটি মোটা পত্রিকা আমাকে দিয়েছিল। আমরা সবাই তখন মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছি এবং ধমনীতে তখনো শিক্ষার্থীর তাজা রক্ত।

তেমন এক সময়েই পশ্চিমি এক নারীবাদী কবিতার অনুবাদ পড়ে চমকে উঠি। কবিতার মূল বক্তব্য—

‘সন্ধ্যার পর বের হয়ো না, তাহলে ধর্ষণের শিকার হতে পারো

যদিও সকাল, দুপুর বা বিকেলেও মেয়েরা ধর্ষিত হয়

হ্রস্ব স্কার্ট পরলে ধর্ষিতা হতে পারো

অবশ্য দেখা গেছে যে বড় পোশাকেও মেয়েরা ধর্ষিতা হয়

ঘরের বাইরে যেও না

তাহলে ধর্ষিতা হতে পারো

অবশ্য প্রায়ই ঘরের ভেতরেও ধর্ষিত হয়

যুবতী মেয়েরা বাড়ির বাইরে গেলে ধর্ষিতা হতে পারে

যদিও শিশু কন্যা এবং এমনকি বৃদ্ধারাও কখনো কখনো ধর্ষিতা হয়

সবচেয়ে ভালো হয়

যদি তুমি নাই হয়ে যাও।’

আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে কি উপরের কবিতাটিই সত্য হয়ে ওঠে না? মাগুরায় আট বছরের এক কন্যা শিশু তার বড় বোনের সংসারে গিয়ে বোনের পাশেই ঘুমিয়ে থেকেও ধর্ষিত হয়েছে। গৃহশ্রমে ক্লান্ত বোন যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল, তখন বোনের শ্বশুর তাকে তুলে নিয়ে পাশের ঘরের মেঝেতে নিয়ে যায় এবং সেখানে বোনের শ্বশুর শিশুটিকে ধর্ষণ করে। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে।

বড় বোন টের পেয়ে প্রতিবাদ জানালে স্বামী তাকে প্রহার করে, শাশুড়ি প্রথমে বিষয়টি ‘মান-ইজ্জতের ভয়ে’ জানাতে দিতে চায় না। তবে রক্তাক্ত শিশুটিকে জিন ধরেছে বলে এক ফকিরের কাছে পাঠালে সেই ফকির বরং স্পষ্ট বলেন যে ‘জিন এমন কাজ করতেই পারে না!’ আরও যেটা বিহ্বল করে দেওয়ার মতো বিষয় সেটা হলো, এই শ্বশুরের এমন অভ্যাস আগেও ছিল।

…ওই শিশুর বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বলেন, আসামি চোখের সামনে ঘুরে ফিরে। তার স্ত্রী ও মেয়ে এখন ঘর থেকে বের হতে চান না।

এই পরিবারে এই বড় বোনটির আগে তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী ও ভাশুরেরও এক স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। শ্বশুর নামের নরপিশাচটি বড় বোনকে আগে জড়িয়ে ধরতো প্রায়ই। মেয়েটি অতিষ্ঠ হয়ে বাবার বাড়িতে গেলে বাবার বাড়ি থেকে উল্টো তাকে ফেরত পাঠানো হয়। এ কাহিনি কল্পকাহিনিকেও হার মানায়!

আট বছরের শিশু যার নারী দেহ বিকশিত হতেই বহু দেরি, সে কি কোনো উত্তেজক পোশাক পরে কাউকে উদ্দীপ্ত করে? আবার এক মধ্যবয়সী শ্রমিক নারীর উল্টানো, অর্ধ-নগ্ন ও ধর্ষিত দেহ সামাজিক মাধ্যমে ভাসতে দেখলাম আমরা।

২০১৬ সালে দিনাজপুরের পূজা নামে পাঁচ বছরের মেয়েটি প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামকে (তখনই যার বয়স ছিল ৪৫) ‘জেঠু’ বলে ডাকলেও ‘জেঠু’ সাইফুল, পূজাকে একদিন খেলার কথা বলে বা চকলেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে গোপনে একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করতে গিয়ে প্রথমে ব্যর্থ হয়ে, ব্লেড দিয়ে পূজার জননাঙ্গ কেটে বড় করে ও ধর্ষণ করে। আহত এবং আক্রান্ত শিশুটির ক্ষতস্থান থেকে রক্ত কিছুতেই যখন বন্ধ হচ্ছিলো না, তখন সেখানে একটি মাটির ডেলা দিয়ে ধর্ষক রক্ত চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে পালিয়ে যায়।

শিশুটি উদ্ধার হওয়ার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর এক ইন্টার্ন নারী ডাক্তার তার ক্ষতস্থানের কাপড় খুলে ভয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন। ক্ষতস্থানে মাটির ডেলা থেকে অসংখ্য ‘ম্যাগট’ বা ছোট পোকা পূজার জননাঙ্গে ঢুকে পড়েছিল এবং ফলে পূজার মস্তিষ্কে অক্সিজেন চলাচল কমে এসেছিল।

পূজা এখনো প্রস্রাবের বেগ সামলাতে পারে না বলে অষ্টম বা নবম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে গিয়েও বর্তমানে পড়াশোনা বন্ধ করেছে। অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস যে, ১৯ ফেব্রুয়ারি সেই সাইফুল ইসলাম জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পূজার বাবার সামনে দিয়েই, মাইক্রোবাসে করে একই পাড়ায় ঢুকেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও আসামিকে আবার কারাগারে পাঠানোর মতো কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ওই শিশুর বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বলেন, আসামি চোখের সামনে ঘুরে ফিরে। তার স্ত্রী ও মেয়ে এখন ঘর থেকে বের হতে চান না। [প্রথম আলো, ১০ মার্চ ২০২৫]

২০১৬ সালে পূজার এই ঘটনা জানতে পেরে ঢাকার ধানমন্ডি সরোবরের পাশে, কনকনে এক শীত-বৃষ্টির বিকেলে আমরা অনেকে প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বলন করেছিলাম। সেটুকুই সার! বাস্তবে কিছু হয়েছে কি?

বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থে এখন হয়ে উঠেছে ধর্ষণের প্রজাতন্ত্র। কারখানায় ঢোকা বা বের হওয়ার পথে ধর্ষিত হয়ে মরে পড়ে থাকছে পোশাক শ্রমিক, চলন্ত বাসে এক গৃহবধূকে তার স্বামীর তীব্র আপত্তির মুখে বাসের পেছনের সিটে তুলে নিয়ে ধর্ষণ এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ কর্তৃক সেই অভিযোগ অস্বীকার, ভুট্টা ক্ষেতে ধর্ষিত ও খুন হওয়া, কর্তিত মুণ্ডু সংখ্যালঘু নারীর শবদেহ পড়ে থাকছে আবার বিপক্ষের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে, পুরুষ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে বা তাদের সামনেই সংখ্যাধিক্য বা অস্ত্রের জোরে তাদের বাড়ির নারীদের ধর্ষণ করে খুন করা হচ্ছে।

এইসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই কবেই না আমেরিকান সাংবাদিক, লেখক এবং নারীবাদী কর্মী সুসান ব্রাউনমিলার বলেছিলেন যে, শারীরিক কারণে ধর্ষণকারী ধর্ষণ করে না। মূলত একজন নারীকে চূড়ান্তভাবে অপমান করতে এবং পুরুষাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতেই ধর্ষণ করা হয়।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ বাঙালি নারীর ধর্ষণের দৃষ্টান্ত টেনে সুসান আরও দেখিয়েছেন যে, কীভাবে ‘বৈরী’ সম্প্রদায় বা নৃ-গোষ্ঠীর মনোবল ভেঙে দিতেও নারীর ওপর আক্রমণ চালানো হয়! শ্রীলঙ্কা থেকে বসনিয়া—একই চালচিত্র!

২০১৬ সালে অনুক অরুদপ্রগাসম (অহঁশ অৎঁফঢ়ৎধমধংধস)-এর উপন্যাস ‘দ্য স্টোরি অফ আ ব্রিফ ম্যারেজ (ঞযব ঝঃড়ৎু ড়ভ ধ ইৎরবভ গধৎৎরধমব)’ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন, তামিল উদ্বাস্তু শিবিরে নায়ক দীনেশকে নায়িকা গঙ্গার বাবা এই বলে আকুতি জানায় যে, তার অবিবাহিত মেয়েটিকে যদি দীনেশ বিয়ে করে, তবে সিংহলী সেনাবাহিনীর ধর্ষণের হাত থেকে সে বেঁচেও যেতে পারে! যেহেতু অবিবাহিত মেয়েদেরই আগে ধর্ষণ করা হয়! দীনেশ বিয়েটি করলেও বাসর রাতেই সরকারি বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণে গঙ্গা মারা যায়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসেই ২০৫ জন নারী ও বালিকা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ১৬৩। জানুয়ারিতে নির্যাতিত ২০৫ জনের ভেতর ৬৭ জন ধর্ষণের শিকার হন। এদের ভেতর ৪২ জনই বালিকা (অনূর্ধ্ব-১৮) এবং ২০ জন বালিকা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। একজন নারী ও একজন বালিকাকে নির্যাতনের পর হত্যাও করা হয়। দু’জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়।

‘ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (আইজিপি)’ প্রদত্ত এক হিসাবে দেখা যায় যে, পাঁচ বছরে দেশ জুড়ে ২৬,৬৯৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন (জধঢ়ব রহ ইধহমষধফবংয: অ ২০২৫ ঙাবৎারবি – খবমধষগবফরপরহব.ওহভড়)।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির ২৮ দিনে ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির ২৯ দিনে এই সংখ্যা একই ছিল। ২০২৪ সালে সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এই আইনে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩। [প্রথম আলো, ১০ মার্চ ২০২৫]

অন্যদিকে ২০২৪-এর নভেম্বরে ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’-এর প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী ২০২০-এর জানুয়ারি থেকে ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরের হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে যে, দেশে প্রতি নয় ঘণ্টায় একটি করে ধর্ষণ হচ্ছে। এর ভেতর প্রতি ৯ ঘণ্টায় ১টি ধর্ষণ হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ১০২২টি দলবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছে। প্রতি ৩টি ধর্ষণের একটির কোনো অভিযোগ কাউকে জানানো হয় না। এ পর্যন্ত মোট ২০২ জন নারী ধর্ষিত এবং খুন হয়েছে। প্রতি ৫ জন ধর্ষিতার ভেতর ৩ জনই শিশু বা কিশোরী (০-১৮ বছর বয়সী)। ধর্ষণের পর বেঁচে যাওয়া বা ‘রেপ সারভাইভর’দের ৪৭ শতাংশই ১৩-১৮ বছর বয়সী। শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঘটনাগুলোয় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই নিপীড়নকারী বহুদিন ধরে শিশুটিকে অনুসরণ করে এসেছে এবং ৪০ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে শিক্ষকদের দ্বারা। [দ্য ডেইলি স্টার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪]

আমেরিকান সাংবাদিক, লেখক এবং নারীবাদী কর্মী সুসান ব্রাউনমিলার বলেছিলেন যে, শারীরিক কারণে ধর্ষণকারী ধর্ষণ করে না। মূলত একজন নারীকে চূড়ান্তভাবে অপমান করতে এবং পুরুষাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতেই ধর্ষণ করা হয়।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাংলাভাষী প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গেও ২০২৪ সালে আর.জি.কর হাসপাতালে টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করার পর ওয়াশরুমে যাওয়া এক তরুণী ডাক্তার ধর্ষণ ও খুন হওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল সেখানকার মিডিয়া ও নাগরিক সমাজ। এত যে দুঃস্বপ্নের দেশ আমাদের, সেখানেও একটি সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার মর্যাদার কোনো তরুণী ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করার পর ধর্ষিত ও খুন হবেন এটা ভাবা যায় না!

তবে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় সবকিছুতেই যেমন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর দড়ি টানাটানি হয়, এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। সেখানে প্রাদেশিক সরকারে ক্ষমতাসীন দল ও তার সমর্থকরা যেমন বলছে যে, বড় জোর মেয়েটি হাসপাতালে অনেক অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারা গেছে যা একজন পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে পারতো। কিন্তু মেয়েটির দেহে আঁচড়-কামড়ের দাগ তবে কেন থাকবে?

সে নিশ্চিত প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল! সেখানেও কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে যে মেয়েটি নিজে থেকেই হয়তো এমন কিছু একটা সম্পর্কে জড়িয়েছিল। এটা যদিও ভাবাও কষ্টের যে এত দীর্ঘ সময় ডিউটির পর এমন কিছুতে কোনো নারী জড়াতে পারেন কিনা! একইসাথে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় সরকারি হাসপাতালগুলোর তরুণ ডাক্তাররাও কী পরিমাণ শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের শিকার!

তারপরও উল্টো ভিক্টিমের দিকেই যাদের আঙুল যাচ্ছে, তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ প্রশ্ন ছুঁড়তে গিয়েই মনে পড়ে যে, বহুদিন ধরে ‘রশোমন [জধংযড়সড়হ, ১৯৫০]’ সিনেমা দেখে যে অব্যক্ত প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ঘুরছি, সবার আগে সারা পৃথিবীর ধ্রুপদি চলচ্চিত্রের ‘মহান’ নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়ার দিকেই কিছু প্রশ্ন ছোঁড়া দরকার।

বনের ভেতর এক যোদ্ধার অভিজাত স্ত্রীকে অতর্কিত মুহূর্তে এক ডাকাত আক্রমণ করে বরকে একটি গাছের সাথে হাত-পা বেঁধে রাখার পর অমন মলিন ও ছিন্ন পোশাকের ভয়ানক দর্শন ডাকাতকে সামান্য সময় প্রতিরোধ করেই মেয়েটি আসলে ‘উপভোগ করতে শুরু করলো?’ অথবা এটি কুরোসাওয়ারও দোষ নয়? যে লেখক মূল উপন্যাসটির রচয়িতা, কুরোসাওয়া সেটাই সিনেমায় ফুটিয়ে তুলেছেন মাত্র?

এটা সেই নারী বিদ্বেষ, যা অসংখ্য বছর ধরে বহু পুরুষ ধমনীতে বহন করে চলেছে। এই নারী বিদ্বেষ আছে জাতক, পঞ্চতন্ত্র, ডেকামেরন থেকে ‘এক হাজার ও এক আরব্য রজনী’তে। নারী সর্বদাই কামে অতৃপ্ত, সে ‘ধর্ষিত’ হয় না, সে উপভোগ করে।

জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, ‘ধর্ষণ এড়ানো না গেলে উপভোগ করুন।’ সত্যি কী উপভোগ করা যায়? এই তীব্র নারী বিদ্বেষ থেকেই আমরা সুস্থ রাজনৈতিক বিতর্কেও অসুস্থতার মূর্তিমান প্রতীক হিসেবে আমাদের দেশের বিভিন্ন নারীদের বেশি বেশি অশালীন মিম, ছবির ফটোশপ, এআই নির্মিত অশালীন ভিডিও, পর্নোগ্রাফিক শাব্দিক সহিংসতার মাধ্যমে ভেতরের ‘সহিংস’ পুরুষ চেহারারই প্রদর্শন করি।

হ্যাঁ, একজন নারীও যদি প্রতিপক্ষের নারীকে সেক্সিস্ট বুলিং করেন, তবে তিনিও ধর্ষকামী। আবার প্রান্তিক যে ছেলে শিশুটি কোনো আবাসিক বিদ্যায়তনে পড়তে গিয়ে ধর্ষিত হয়, সেও ‘ধর্ষিত’।

একবার চলুন প্রত্যেকে প্রত্যেকের আয়নার সামনে দাঁড়াই!