বড় ধরনের চাপের মুখে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প

প্রকাশিত: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০

কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, অগ্রিম আয়কর, আমদানি শুল্ক ও করপোরেট ট্যাক্স প্রত্যাহার না হওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। পোল্ট্রি মুরগির খাবার বিশেষ করে সয়াবিন মিল, ভুট্টার গুঁড়া, গমের গুঁড়া, চালের কুঁড়াসহ সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। ফলে এই খাতের উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়ত লোকসানের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। তারা বলছেন, অচিরেই এর সুরাহা না হলে বিপদে পড়বে এই শিল্প। ফলে আমিষের ঘাটতিতে পড়বে জনসাধারণ। এই সংকট কাটাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুযোগ চেয়েছেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ও বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা করেন মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, ব্রয়লার মুরগির ওষুধ ও খাবারের দাম বেড়েছে। তাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না করলে অচিরেই ব্রয়লার মুরগির দামে এর প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গাজীপুর, জয়দেবপুর, টঙ্গী থেকে মুরগি এনে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। এ কারণে প্রতিদিনই মুরগির খাবার কিনতে হয়। মুরগির সব ধরনের খাবারের দাম বেড়েছে। এসব কারণেই দাম বাড়াতে হচ্ছে। এটি না করলে তো আমাদের লোকসান হবে।’

পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসডিজি’র ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ‘লক্ষ্য-২’ সরাসরি এবং ১৪টি লক্ষ্যের সঙ্গে পোল্ট্রি খাতের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাদের মতে জিডিপি’তে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান ২ শতাংশের ওপরে। এই খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকারও অধিক বিনিয়োগ হয়েছে, বার্ষিক টার্নওভার ৩৫-৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ২৫ লাখ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী।

আন্তর্জাতিক কৃষি ও খাদ্য সংস্থার মতে, একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে গড়ে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দেশে বছরে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডিম খান মাত্র ৫০ থেকে ৬০টি। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি ডিম উৎপাদন হয়। এই হিসাবে বছরে ১০৪টি ডিম খেতে হলে আমাদের আরও দেড় কোটি ডিম উৎপাদন করতে হবে।

পশুপাখির খাবার বিক্রি করেন রাজধানীর চানখারপুলের সোনালী ট্রেডার্সের মালিক আশরাফ আলী। তিনি জানিয়েছেন, ব্রয়লার মুরগির প্রধান খাবার সয়াবিন মিলের দাম বেড়েছে অনেক। সাধারণত দেশের ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেই আমরা এই খাবারটি কিনে আনি। বর্তমানে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই পণ্যটির ওপর আমদানি শুল্ক বহাল থাকায় দাম বাড়িয়েছে দেশীয় ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি কাঁচামালের ওপর অগ্রিম আয়কর, আমদানি শুল্ক ও করপোরেট ট্যাক্স প্রত্যাহার না হওয়ায় এসব খাদ্যের দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে এই পোল্ট্রি শিল্প।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য মোট ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মধ্যে প্রোটিন কনসেনট্রেট, ভুট্টা, লাইম স্টোন, হুইট পলিশ, সয়াবিন মিল, রাইস ব্রান, ফিসমিল, ব্রয়লার ফিড ও লেয়ার ফিড অন্যতম।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিআব) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০০৭ সালে এই ৯ ধরনের কাঁচামালের প্রতি কেজির দাম ছিল যথাক্রমে ৩৯ টাকা ২৭ পয়সা, ১৪ টাকা ৭৭ পয়সা, ৫ টাকা ৫০ পয়সা, ১৪ টাকা ৯১ পয়সা, ২০ টাকা ৬৮ পয়সা, ১০ টাকা ৯ পয়সা, ৩৬ টাকা, ২১ টাকা ৮ পয়সা ও ১৮ টাকা ৭৮ পয়সা।

১২ বছরের ব্যবধানে একই পণ্য প্রতি কেজির দাম বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৫০ টাকা, ২২ টাকা ৪৩ পয়সা, ১০ টাকা, ২৮ টাকা ২৯ পয়সা, ৪১ টাকা ৯৩ পয়সা, ২১ টাকা ৭১ পয়সা, ১৫০ টাকা, ৪৩ টাকা ৫৭ পয়সা ও ৩৭ টাকা ৭৮ পয়সা দাঁড়িয়েছে।

শতকরা হিসাবে এই ৯টি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৩২, ৫১ দশমিক ৮৬, ৮১ দশমিক ৮২, ৮৯ দশমিক ৭৪, ১০২ দশমিক ৭৬, ১১৫ দশমিক ১৬, ৩১৬ দশমিক ৬৭, ১০৬ দশমিক ৬৯ ও ৯৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

জানা গেছে, চলতি বছর প্রতিকেজি ভুট্টা ১৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৭০ পয়সা, সয়াবিন মিল ৩১ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ৩৮ টাকা, ডিওআরবি ১১ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৫০ পয়সা, রাইস পলিশ ১৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৪৮ পয়সা, কর্ন গ্রটেন মিল ৬১ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৬৫ টাকা, মাস্টার্ড অয়েলকেক ২১ টাকা ৮৮ পয়সা ২৪ টাকা, হুইট ফ্লাওয়ার (৩২ শতাংশ গ্রটেন) ২৩ টাকা থেকে ২৭ টাকা দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে এসব পণ্যের দাম আরও বেশি।

ফিআব-এর সভাপতি এহতেশাম বি শাহজাহান জানিয়েছেন, পোল্ট্রি ফিডে আগাম কর আরোপের ফলে কাঁচামাল আমদানিতে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং পুঁজির সংকট তীব্র হয়েছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহসানুজ্জামান জানিয়েছেন, পোল্ট্রি ফিড তৈরির কাঁচামালগুলো এখনও আমদানিনির্ভর। মোট চাহিদার মাত্র ৫০ ভাগ ভুট্টা দেশে উৎপাদিত হয়, সয়াবিন উৎপাদিত হয় না। দেশীয় সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া সয়াবিন মিলে চাহিদা মেটে মাত্র ৫০ শতাংশ। বাকি উপাদান