গ্যাস উদগিরণ বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ

আতঙ্কে এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ৮:৫৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বিদ্যানগরে শেরেবাংলা উচ্চবিদ্যালয়ে নলকূপ বসানোর স্থান দিয়ে গ্যাস উদগিরণ অব্যাহত রয়েছে। এখনও নিরাপত্তামূলক কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পেট্রোবাংলা বা অন্য কোনও সংস্থা। এদিকে অব্যাহত গ্যাসের চাপে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, সীমানা প্রাচীরসহ আশপাশের বেশ কিছু গাছপালা ধসে পড়েছে। আগুন আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে কসবার শেরেবাংলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠের এক অংশে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছিল। এর দুই দিনের মাথায় বুধবার সকাল ৯টার পর থেকে পাইপের মুখ দিয়ে তীব্রবেগে ও বিকট শব্দে গ্যাস, পানি ও বালু বের হয়ে বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হয়। গ্যাসের তীব্র চাপে বুধবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, বেষ্টনী দেয়াল, আশপাশের বড় বড় গাছপালা ধসে পড়েছে। আতঙ্কে বাড়িঘরের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের পাশের এলাকার বাসিন্দারা।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও আগুনের ঝুঁকি এড়াতে পেট্রোবাংলা বা অন্য কোনও সংস্থার পক্ষ থেকে কোনও ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

বিদ্যালয়ের পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা জহেরা বেগম জানান, ‘বুধবার সকাল থেকে গ্যাস উঠছে। আমরা খুব ভয়ে আছি। কী করবো বুঝতে পারছি না।’

একই এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘গ্যাস ওঠার পর থেকে আতঙ্কে আমাদের রান্নাবান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা অন্য জায়গা থেকে পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশনা পাচ্ছি না।’

বিদ্যানগর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন রেজা ও ফরিদ মিয়া জানান, গ্যাস উঠছে আর লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছে। সবাই আতঙ্কিত কখন আগুন লেগে যায়। তারা নিরাপত্তার দাবি জানান।

এদিকে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুন ভূইয়া জানান, ‘গ্যাসের চাপে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, বেষ্টনি দেয়ালসহ আশপাশের বেশকিছু গাছপালা ধসে পড়েছে। ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাপেক্স বা পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

এদিকে গ্যাস উদগিরণস্থল পরিদর্শন করে বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন) এর জিএম (জিওলজিস্ট) আলমগীর হোসেন জানান, তারা পরীক্ষার জন্য আলমত সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি প্রকৃত গ্যাসের স্তর নয়। গ্যাসের লেয়ার দুই থেকে আড়াই হাজার মিটার গভীরে থাকে। মাত্র ৫৪০ ফুট গভীরে গ্যাস পাওয়ার কোনও সুযোগ আছে বলে মনে হচ্ছে না। এটি মিথেন বা পকেট গ্যাস হতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যবেক্ষণ করবো। পরে কী করা যায় তা নিয়ে ভাবা হবে।’

এদিকে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল কাউছার ভূইয়া জীবন জানান, তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দ্রুত যেন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

এদিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ১ কিলোমিটারের মধ্যে সালদা গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সেখান একটি কূপ থেকে দৈনিক সাড়ে ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।