ব্যবসায়িক স্বার্থে গণস্বাস্থ্যের কিট ওষুধ প্রশাসন জমা নেয়নি অভিযোগ ডা. জাফরুল্লাহ’র

প্রকাশিত: ৮:২৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০

গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস সংক্রান্তকরণ কিট পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসন নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, তারা আমাদেরকে বলেছে এটার অনুমোদন নেই বলে আমরা গ্রহণ করতে পারছি না। আপনাদের কন্টাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন এর মাধ্যম হয়ে আসতে হবে। দেখেন কী আমলাতান্ত্রিকতা!

রবিবার (২৬ এপ্রিল) বিকালে ধানমন্ডি ১৪/ ই রোডে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনারা জানেন গতকাল আমরা করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট হস্তান্তরের একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম এটা অনুমোদনের জন্য। আর তা করার দায়িত্ব হচ্ছে ওষুধ প্রশাসনের। দুর্ভাগ্য ওষুধ প্রশাসন এমন লোকের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মাকোলজিস্ট। যার ফলে তারা এই জিনিসগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে না। তারা সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেখানে জনগণের কোনও স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি করা ছাড়া তাদের ঘুম ভাঙে না।

তিনি আরও বলেন, ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতে আমি ছিলাম, সেখানে বলেছিলাম যে ওষুধের মূল্য সরকার নির্ধারণ করবে, তবে কোম্পানিকে লাভ দিয়ে। কিন্তু কালে-কালে এখানে কোম্পানির স্বার্থটাই বড় হয়ে গিয়েছে। ঠিক গণস্বাস্থ্যের কিট ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট ইমিউনোঅ্যাসি’ক্ষেত্রেও তারা একই ঘাপলাটা করেছে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যালয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন এটি জমা দিতে যান। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর তা গ্রহণ করেনি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজনের একজনকে ওষুধ প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা ওষুধ প্রশাসনকে বলেছি, আপনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে লিখে দেন এই কিটগুলো পরীক্ষা করে দেওয়া জন্য। কিন্তু তারা বলে সেটা করতে পারবে না। আমি বলতে চাই, সরকারি খরচের জন্য যা টাকা লাগে দেবো। তবে কোনও ঘুষ দিতে পারবো না। কোনও ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে পারবো না। এতে আমাদের কিট অনুমোদন হোক বা না হোক।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, গত ৪৮ বছরে গণস্বাস্থ্য কাউকে ঘুষ দেয়নি, দেবে না। গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট (ব্যবহারযোগ্য হয়ে) আসুক আর না আসুক, কাউকে ঘুষ দেবো না। কিন্তু, লড়াই করে যাবো।

তার অভিযোগ, সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ব্যবসায়িক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের (করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ) কিট গ্রহণ করেনি সরকার। আমরা জনগণের স্বার্থে শুধু সরকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কিটটি কার্যকর কি-না, তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে প্রতি পদে পদে পায়ে শেকল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

জাফরুল্লাহ বলেন, আমি একটা জিনিস তৈরি করেছি। এটা ভালো কী মন্দ দেখার দরকার সেই ব্যক্তির যার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আর সেটা ঠিক করা উচিত ওষুধ প্রশাসনের। সেটা আমরা তাদেরকে বোঝাতে পারছি না। তারা বলছে, সিআরও মাধ্যমে করার। আমি যদি তাদেরকে টাকা দিয়ে সেটা করাই, তাহলে আমার টাকা খেয়ে কেউ কি বলবে, এটা খারাপ? এরা সরকারের পতনের জন্য জনগণকে ক্ষিপ্ত করাচ্ছে। জনগণকে তারা অকারণে ক্ষিপ্ত করাচ্ছে।

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট ইমিউনোঅ্যাসি’ কিট তৈরির জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক দলের সদস্য ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, দেশে এখনও করোনা শনাক্তকরণের কিটের কোনও নীতিমালা নেই। আর এমন জরুরি অবস্থায় তার দরকারও নাই। এরমধ্যেও যত প্রকারের ডকুমেন্ট চেয়েছেন সব জমা দিয়েছি। যতগুলো কাজ স্বাস্থ্য অধিদফতর করতে বলেছে আমরা তা ধাপে ধাপে করেছি। তারা আজকে যখন সিআরওর কথা বলছে তখন সেটা আপনারা করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঘুষ চাওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ বলেন, না ঘুষ চাওয়া হয়নি। সেই সাহস তাদের নেই। গবেষণার দুর্নীতি এটা নতুন নয়। আপনাকে হয়রানি বারবার করা হলে একসময় নিজে থেকে খোঁজ নিবেন বড় কর্মকর্তার বাসার বাজার আছে কিনা। ঘুষ তো নানাভাবে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু আমরা কাউকে টাকা দিতে পারবো না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে, কিভাবে তারা ব্যবসায়িক স্বার্থকে রক্ষা করছেন। তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে রেখে চলেন, তাতে তাদের লেনদেনে সুবিধা হয়। গত ৪৮ বছরে গণস্বাস্থ্য কাউকে ঘুষ দেয়নি, দেবে না। গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট (ব্যবহারযোগ্য হয়ে) আসুক আর না আসুক, কাউকে ঘুষ দেব না। কিন্তু লড়াই করে যাবো ।’

সূত্র-বাংলাট্রিবিউন।