
ডেস্ক রিপোর্ট:
আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ঘোষিত বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস আজ। বিশ্বজুড়ে উদযাপিত দিবসটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন, প্রবেশাধিকার, নীতিমালা এবং সার্বজনীন সুবিধা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। আধুনিক সমাজে প্রযুক্তির বিশাল ভূমিকা এবং ডিজিটাল রূপান্তরের সুযোগ-সুবিধাকে সামনে রেখে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘ডিজিটাল রূপান্তরে লিঙ্গ সমতা’ (এবহফবৎ ঊয়ঁধষরঃু রহ উরমরঃধষ ঞৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ)।ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, দিবসটির সূচনা ১৮৬৫ সালের ১৭ মে, যখন প্যারিসে ইন্টারন্যাশনাল টেলিগ্রাফ কনভেনশনের মাধ্যমে গঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল টেলিগ্রাফ ইউনিয়ন’। পরবর্তীতে সেটিই রূপ নেয় বর্তমান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নে (আইটিইউ)। ১৯৬৯ সাল থেকে দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালন শুরু করে আইটিইউ, যা আজও বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নকে তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফাইভ-জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন এবং আইওটি প্রযুক্তি শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থারই উন্নয়ন ঘটায়নি, বরং কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। ফলে, এসব প্রযুক্তি শুধু জীবনযাত্রা সহজ করেনি, বরং বিশ্বের নানা বৈষম্য ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
তাছাড়া, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবন এখন আর বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজনীয়তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের মাধ্যমে সরকারি সেবাপ্রদান যেমন সহজ হচ্ছে, তেমনি দুর্বল জনগোষ্ঠীর কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক সেবা পৌঁছানোও সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, আইটিইউ ও ইউএনডিপির মতো সংস্থাগুলো বলছে, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী-পুরুষের সমতা, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা আরও বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে বৈষম্য এবং ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক গ্রামীণ বা দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনো উচ্চগতির ইন্টারনেট কিংবা স্মার্টফোন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত না করা গেলে ডিজিটাল অগ্রগতি সমাজে নতুন বৈষম্য তৈরি করতে পারে।এ প্রসঙ্গে আইটিইউর জেন্ডার ও যুব বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা সিলভিয়া পোল বলেন, যখন সবাই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন লাভ করে, তখন সমগ্র সম্প্রদায় উপকৃত হয়। নারীরা যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা, ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও সেবাগ্রহণে সম্পৃক্ত হতে পারে, তবে তা সমাজ ও অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন ঘটায়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটের বাইরে রয়েছে, যার একটি বড় অংশ নারী ও কিশোরী। অনলাইন নিরাপত্তা, ডিজিটাল দক্ষতা ও ডিভাইসের মূল্যগত বাধার কারণে এখনও নারীরা অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছেন।
আইটিইউর ‘ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগারস ২০২৪’ অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৭০ শতাংশ পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যেখানে নারীর সংখ্যা ৬৫ শতাংশ। এর মানে ১৮৯ মিলিয়ন পুরুষ বেশি অনলাইনে রয়েছেন নারীদের তুলনায়। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বৈষম্য আরও প্রকট—সেখানে মাত্র ২৯ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যেখানে পুরুষদের হার ৪১ শতাংশ।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। গত এক দশকে দেশটি ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের অধীনে মোবাইল ইন্টারনেট, সাইবার নিরাপত্তা, ওটিটি সেবা, ডিজিটাল পেমেন্ট, এবং স্টার্ট-আপ সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে এখনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি রয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন করা হয়েছে। আজ বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের ১২১ নম্বর কক্ষে আয়োজন করা হয়েছে এক সংবাদ সম্মেলনের।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.)। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্বে) মো. জহিরুল ইসলাম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান, কমিশনার, মহাপরিচালক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন।