বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৫০২ সিটের মধ্যে ৩৯৭টিই বেদখল

প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২৪

আফরিন আক্তারঃ

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছেলেদের একমাত্র হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। এই হলের সিট সংখ্যা ৫০২। হলটিতে শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসন থেকে সিট বরাদ্দ নিয়ে থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১০৫ জন শিক্ষার্থী সেই কাজটি করছেন। বাকী ৩৯৭ জন শিক্ষার্থী হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই সিট দখল করে দীর্ঘদিন থেকে আসছে। বিষয়টি হল প্রশাসনের জানা থাকলেও অবৈধ শিক্ষার্থীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলটিতে দুটি ব্লক আছে। এগুলো ‘এ’ এবং ‘বি’ ব্লকে ভাগ করা। ‘এ’ ব্লকের ৬৫টি রুমে ২৬০ জন শিক্ষার্থী এবং ‘বি’ ব্লকের ৬৫টি রুমে ২৪২ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারেন।

হল প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, ‘এ’ ব্লকের ২৬০টি সিটের মধ্যে ৯৭টি সিট বৈধ আছে এবং ‘বি’ ব্লকের ২৪২টি সিটের মধ্য ৮৪টি সিট বৈধ আছে। কিন্তু এ হিসেবে কাগজে কলমে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘এ’ ব্লকের ৩৮টি এবং ‘বি’ ব্লকের ৩৮টি সিটে থাকা শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছে অনেক আগে। কিন্তু সিটগুলো বাতিল না করাতে এগুলো এখনো হল প্রশাসনের হিসেবে রয়ে গেছে। এই সিটগুলো বাতিল না হলেও এগুলো বেদখল আছে। এই সিটগুলো বাদ দিয়ে দেখা যায় ‘এ’ ব্লকে মাত্র ৫৯টি এবং ‘বি’ ব্লকে ৪৬টি সিট বৈধ আছে।

হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার পূর্বে হলের অধিকাংশ সিট বৈধ ছিল। তখন শিক্ষার্থীরা হলে ওঠার সময় প্রশাসন থেকে সিট বরাদ্দ নিয়ে উঠতেন এবং হলের সিট নিয়ে প্রশাসনের নজরদারি ছিল। কিন্তু করোনার পর থেকে হলের সিট নিয়ে হল প্রশাসনের নজরদারি কমে যায় ফলে শিক্ষার্থীরা হলে অবৈধভাবে থাকতে শুরু করেন।

হলের একটি সূত্র বলছে, ১৩০টি রুমের মধ্যে তাবলীগ জামাতের ৮টি রুম ছাড়া বাকী সবগুলো রুম ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এই রুমগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ৮ থেকে ১০টি গ্রুপ-উপগ্রুপ। কোন রুমে কে উঠবে, কে নামবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা ছাত্রলীগ নেতারাই ঠিক করে দেন। বর্তমানে হলে ওঠার জন্য ছাত্রলীগের বড় ভাইদের ভুমিকাই মূখ্য। কেউ হলে উঠতে চাইলে কোন বড় ভাইকে ধরে তার সাথে রাজনীতি করার প্রতিশ্রুতি দিলেই সহজে হলের সিট পাওয়া যায়।

এমন অবস্থার জন্য অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ি করছেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ হলে থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু হল প্রশাসনকে সব কিছু মনিটরিং করতে হবে। তারা এগুলো মনিটরিং করছেনা, শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করছেনা। যদি হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে থাকে তাহলে এমনিতেই শিক্ষার্থীরা হলের সিট বৈধ করে নিবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘এতগুলো সিট অবৈধ থাকা হল প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা কখনোই আমাদের নেতা-কর্মীদের বলিনা হলে অবৈধভাবে থাকতে। হলের অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য হল প্রশাসন অভিযান চালাক, আমরা সহযোগিতা করবো।’

হল প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, করোনার পর থেকে কোন সাধারণ শিক্ষার্থীকে হলের সিট দিতে পারেননি হল প্রশাসন। একাধিকবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার বিজ্ঞপ্তি দিলেও সেটা কার্যকর হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালে হলে ওঠার বিজ্ঞপ্তি দিলে সেখানে দুইজন শিক্ষার্থী আবেদন করেন কিন্তু তারা হলে উঠতে পারেননি।

তবে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল প্রশাসন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেননা বলেই তারা হলে অবৈধভাবে থাকছেন। হল প্রশাসন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিলে তারা হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে বৈধভাবে থাকতেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের হলে অবৈধভাবে থাকার কারণে হল প্রশাসন মাসে প্রায় ১ লক্ষ টাকা আয় করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হলে থাকার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে মাসে ২৫০ টাকা সিট ভাড়া দিতে হয়। সে হিসেবে ৫০২ জন শিক্ষার্থী থেকে প্রতি মাসে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা আয় করার কথা। কিন্তু হল প্রশাসন প্রতি মাসে আয় করছেন মাত্র ২৬ হাজার ২শ ৫০ টাকা।

অন্যদিকে একজন শিক্ষার্থীকে হলে উঠতে হলে হলের বিভিন্ন খরচ বাবদ এককালীন ১ হাজার টাকা দিয়ে হলের সিট বরাদ্দ নিতে হয়। অবৈধভাবে শিক্ষার্থীরা থাকাতে এই খাতে হল প্রশাসন প্রায় ৪ লক্ষ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম মিরু বলেন, ‘এতগুলো সিট অবৈধ থাকা উদ্বেগের। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি মাত্র তিন মাস হয়েছে। এর মধ্যে আমি কিছু সমস্যার সমাধান করেছি। এ পর্যন্ত দুইবার অবৈধ সিটগুলো বৈধ করার জন্য বিজ্ঞ