ফরিদপুরে মাদক মামলায় পুলিশ পরিদর্শকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ, জুন ৩, ২০২৪

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরে মাদক মামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।সোমবার (৩ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শিহাবুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামির নাম শেখ আজম (৪০)। তিনি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পাঁচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। ওই সময় তিনি ঝিনাইদহ জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) পদে কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত দেখানো হয়। রায় ঘোষণার সময় পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝিনাইদহ থেকে ফরিদপুরের দিকে আসা একটি মোটসাইকেল মধুখালী রেলগেটের পশ্চিম দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে রাস্তা পার হওয়ার সময় মজিবর মোল্লাকে (৫৫) চাপা দেয়। এ ঘটনায় মজিবর আহত হন। এলাকাবাসী মজিবরকে উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর মোটরসাইকেল আরোহী মো. নূর আলম (৩৫) পালিয়ে যান। তবে ওই মোটরসাইকেলের আরেক আরোহী পুলিশ কর্মকর্তা শেখ আজম পালানোর চেষ্টা করলে জনতা তাকে আটক করে।পরে মধুখালী থানার পুলিশ এসে দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল তল্লাশী করে একটি বাক্স থেকে ৩৯ বোতল এবং তেলের ট্যাঙ্কে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা ৪৩ বোতলসহ মোট ৮২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে। তখন যার মূল্য দেখানো হয় ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা।

এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মধুখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৩(খ) ধারায় শেখ আজম ও মোটরসাইকেল চালক বরগুনা সদরের গুদিঘাটা গ্রামের মো. নূর আলমকে (৩৫) আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান ২০১৮ সালের ৪ মে পুলিশ কর্মকর্তা শেখ আজমসহ ওই দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি সানোয়ার হোসেন বলেন, আদালত পুলিশ কর্মকর্তা শেখ আজমকে মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামি মোটরসাইকেল আরোহী নূর আলমকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

তিনি আরও বলেন, এই রায় সমাজের অপরাধীদের একটি কড়া বার্তা দেয়। যতই ক্ষমতা থাক অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। কারণ এই মামলায় যার যাবজ্জীবন হয়েছে তিনি রানিং পুলিশ কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছাড় দেওয়া হয়নি। তাই এই রায় সমাজে অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।