পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যে ঈদের আনন্দ খুঁজে নেন তারা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
![পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যে ঈদের আনন্দ খুঁজে নেন তারা](https://www.newspostbd.com/wp-content/uploads/2024/04/atm-20240409131043.jpg)
জেলা প্রতিনিধি,ফেনীঃ
বাগেরহাট থেকে ফেনী এসে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন মমিনুল ইসলাম। সাত বছর ধরে এ কাজ করেই চলছে তার পরিবার। সবার মতো পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের সুযোগ হয় না মমিনুলের। এ নিয়ে শুরুতে আক্ষেপ ছিল, এখন মানিয়ে নিয়েছেন।সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে ফেনী শহরের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। তারা সবাই ঈদের ছুটিতে দায়িত্ব পালনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে নিজেদের পরিবার ও ব্যাংকের কাস্টমার সবারই উপকার হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজ করছেন মাহবুবুল হক। পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপনের কথা জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনের সুযোগ হয় না। ইচ্ছে থাকলেও পেটের দায়ে বাড়ি যেতে পারি না। ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হবে। পরিবারের ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়িতে বেতনের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ ৬ বছর এভাবেই যাচ্ছে। শুরুতে খারাপ লাগলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি।
ইউনিয়ন ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত নাসির উদ্দিন নামে এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, মানুষজন নিজ প্রয়োজনে টাকা তোলেন। প্রতিদিন চোখের সামনে হাজার হাজার টাকা উড়ছে। কিন্তু আমার কাজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাধ্যের মধ্যই সবকিছু করতে হয়। সন্ধ্যা ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি পালন করি। তের হাজার টাকা বেতন পাই। এবারও টাকা পেয়ে চাঁদপুরে থাকা পরিবারের ঈদের কেনাকাটার জন্য পাঠিয়েছি। ঈদে যেতে না পারলেও পরবর্তী ছুটি পেলে বাড়ি যাব। ঈদ আনন্দ এখানে ডিউটি পালনেই।
সাহাব উদ্দিন নামে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মোড় শাখার বুথে দায়িত্বরত আরেকজন বলেন, কয়েক বছর ঢাকাতে ছিলাম। গত ৫ বছর ধরে ফেনীতে আছি। করোনাকালীন সময়েও রোজা রেখে অনেকদূর হেঁটে এসে বুথে কাজ করেছি। কিন্তু বিনিময়ে কিছু পাইনি। কখনো পাই না। ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হবে। গত কয়েক বছরে বেশিরভাগ ঈদই এভাবে কাটছে। বাড়িতে দুই ছেলে ও স্ত্রী আছে। চাইলেও তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে পারি না।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত বেলায়েত হোসেন বলেন, এ বুথে আমরা তিনজন কাজ করি। যেকোনো একজন ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ ছিল। সেখান থেকে একজন চলে যাওয়ায় আমার যাওয়া হয়নি। ঈদের পরে যাব। তবে বাড়িতে বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। যেতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু এমন পেশায় আছি আপসোস করেও আর কী করব। এখানেই আমাদের ঈদ আনন্দ।ফেনী শহরের ৫০টিরও বেশি এটিএম বুথে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মীদের সবার গল্প প্রায় একইরকম। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই আপন ঠিকানায় ছুটে গেলেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে অংশ নিতে পারছেন না এসব নিরাপত্তাকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একটি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ব্যাংকের বুথে কাজ করলেও তাদের কোম্পানির মাধ্যমে অফিস নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমাদের সঙ্গে তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই। সেজন্য ছুটির বিষয়ে আমরা কিছু করার সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহযোগিতা করি। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।