নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর কর্মীদের হুমকি-নির্যাতনে আতঙ্কে গ্রামবাসী, যেতে পারছেন না বাজারে

প্রকাশিত: ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,ঠাকুরগাঁওঃ 

যদিও গ্রামে ভোট নেই তবু ভোটের আমেজ উপভোগ করতে একই সঙ্গে ঘর মেরামতের কাজ করাতে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন চাকরিজীবী মোহম্মদ আলম। গত মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজ গ্রামের কেন্দ্রে তার সমর্থিত পরাজিত প্রার্থী ভোটের ফলে এগিয়ে থাকায় উল্লাস করেছিলেন তিনি। শেষে তার প্রার্থী ভোটের সমষ্টিগত ফলে হেরে যান। পরদিন সকালে বাড়িতে নাস্তা সেরে স্থানীয় গঞ্জে যান ঘর নির্মাণ শ্রমিকের খোঁজে। এসময় তাকে আটক করে বিজয়ী প্রার্থীর কয়েকজন কর্মী, প্রশ্ন করে গতকাল এভাবে উল্লাস কেন করেছিলো সে- এই বলে মারধর শুরু করে এবং সকালের ভরা বাজারে গায়ের জামা ছিঁড়ে নেয়।

বুধবার (২২ মে) সকাল ১০টায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকার বালিয়া হাটে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন দুপুরে ওই গ্রামে গেলে সাংবাদিকদের নির্যাতিত আলম এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করেন।আলম বলেন, ‘সকাল থেকে বিজয়ীদের থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাজারে অন্য সমর্থকদের উপহাস করা হচ্ছে। আমি কিছু মনে করিনি৷ কারণ আমি গ্রামের ছেলে হলেও চাকরির সুবাদে বাইরে থাকায় এখানকার ভোটার নই। আমার ভোট বাইরে। কোন রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নই। নির্বাচনের দিন পছন্দের প্রার্থীর জন্য শুভকামনা থেকেই আনন্দ করা। এর জন্য আমাকে এভাবে লাঞ্চিত হতে হবে ভাবতেও পারিনি।’

আলমের স্ত্রী বকুল আক্তার বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শোনার পরে স্থানীয়দের নিয়ে বাজারে যাই৷ হামলাকারী বিজয়ী প্রার্থীর কর্মী মন্টুকে ভাই সম্বোধন করে জানতে চাই এ ঘটনার কারণ কী? তিনি আমাকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন। এতে আমার সঙ্গে থাকা অন্য নারীরা প্রতিবাদ করলে ওনি ছুরি বের করে আমার সঙ্গে থাকা এক নারীর পেটে ঠেকিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় আমরা আতঙ্কিত হলে স্থানীয় বাজারের লোক তাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়।’

স্থানীয়রা এমন ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক ঘটনা উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং সমাজের বিশৃঙ্খলা রোধে নতুন প্রজন্মের মানসিক চিন্তার উন্নয়নে সঠিক বিচারের দাবি করেন।স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘ভোটে জয়-পরাজয় থাকবে। ভোটের পরে এমন মারধরের ঘটনার দায় কে নিবে? অতিউৎসাহী হয়ে নিজেদের গ্রামের শান্তি নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। আমরা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তিনি যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখেন। কারণ ওই উশৃঙ্খল মানুষগুলো সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঘুরেন এবং যেখানে-সেখানে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতেও তার নাম ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন।’

স্থানীয় কলেজ ছাত্র রাব্বি বলেন, ‘নির্বাচনে আমার পছন্দের প্রার্থী থাকতে পারে। তিনি হেরে যেতেও পারে৷ তাই বলে নির্বাচন শেষে এমন আচরণ অবশ্যয় কাম্য নয়। এমন চিত্র আতঙ্কের। দোষীকে আইনের আওতায় না আনা গেলে তারা আরও বেপরোয়া হবে।’ এক নারী বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে গ্রামে বন্দি হয়ে ছিলো মানুষ। কেউ বাজারে যাওয়ার সাহস করেনি। আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। পরে পুলিশ এসে আমাদের কিছুটা ভয় কেটেছে। সমাজের এসব স্পর্ধা থামানো না গেলে অপরাধ বাড়বে। বড় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়ে যেতে পারে।’

খবর পেয়ে ঘটনার স্থানে যান ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক এস আই পিযুষ। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় তেমন কোন বিষয় হয়নি। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তার অভিভাবকগণ থানায় এসে তাকে নিয়ে গেছে।’এ বিষয়ে জানতে বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বনী আমিন বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পর আমি ওখানে গিয়েছি। পরে থানা থেকে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছি।’