দুই মেশিনে এনু-রুপনের টাকা গুনতে তিন ঘণ্টা লাগল র‍্যাবের

সোয়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বই, এক কেজি সোনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইউয়ান, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম

প্রকাশিত: ৮:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০

রাত তখন সাড়ে ১২টা। র‍্যাবের একটি টিম অভিযান চালায় পুরান ঢাকার ওয়ারি এলাকার লালমোহান সাহা স্ট্রিটের ১১৯/১ নম্বর বাড়ির নিচ তলায়। তারা গিয়ে দেখতে পান ডানদিকের ফ্ল্যাটটির দরজা তালাবদ্ধ। পরে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে র‍্যাব সদস্যরা। তারা গিয়ে দেখতে পান একটি কক্ষে পাচটি ভল্ট সাজানো আছে। এর মধ্যে একটি ভল্টের ড্রয়ার ভাঙা। বাকি ভল্টগুলোর তালা ভেঙে অবাক হয়ে যান র‍্যাব কর্মকর্তারা। প্রতিটি ভল্টে ১০০০ টাকার নোটের বান্ডিল আর বান্ডিল। সব বান্ডিল বের করেন তারা।

 

অবশেষে কক্ষের মাঝখানে টাকা রাখার পর যেন টাকার পাহার হয়ে যায় সেটি। হাতে গুনে এই টাকার হিসাব করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এ কারণে পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে র‍্যাব। সকাল ৯টার দিকে ব্যাংক খোলার পর একটি ব্যাংক থেকে দুটো টাকা গোনার মেশিন নিয়ে আসেন। সকাল ১০টা থেকে র‍্যাবের ৩/৪ জন কর্মকর্তা টাকা গোনা শুরু করেন। সেই টাকা গুনতে গুনতে বেজে যায় বেলা ১টা। ৩ ঘণ্টা মেশিন দিয়ে টাকা গুনে র‍্যাব দেখতে পায় সেখানে রয়েছে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা।

শুধু তাই নয় সেই ফ্ল্যাটটি থেকে র‍্যাব জব্দ করেছে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বই, এক কেজি সোনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইউয়ান, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম।

 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিবুল হাসান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকার লাল মোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯/১ বাড়িতে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় র‍্যাব ওই বাসায় অভিযান শুরু করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। বাড়িটি গ্রেপ্তারকৃত এনামুল হক এনু ও রূপন ভূইঁয়ার।

 

তিনি বলেন, সরু গলির ওই বাসায় পাঁচটি সিন্দুকভর্তি টাকা ও পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বইয়ের পাশাপাশি ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বাসাটি খুব ছোট আকারে। এখানে মাত্র একটি চৌকি আছে। এটি ছয়তলা ভবনের নিচতলার একটি বাসা। ধারণা করা হচ্ছে, এ বাসায় টাকা রেখে কেউ এর পাহারায় থাকতেন। তবে এখান থেকে কাউকে আটক করা যায়নি।

উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর ২৪ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভুইয়ার মালিকানাধীন বাড়ি থেকে ৫ কোটি টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করে র‍্যাব-৩। এর পর তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়। সেই মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। পরে সিআইডি দুই ভাইকে কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।