টেকসই উন্নয়নে ডিজিটাল উদ্ভাবন কাজে লাগাচ্ছে নগদ

প্রকাশিত: ৬:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২৪

সেলিনা আক্তারঃ

টেলিযোগাযোগের সুবিধাকে আর্থিক খাতে ব্যবহারের অনন্য দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সংযোগকে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।আর এক্ষেত্রে যুগান্তকারী উদ্ভাবন নিয়ে বাজারে এসে সব পাল্টে দিয়েছে দেশীয় মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ। বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের অন্তত ৯টি ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি ডিজিটাল উদ্ভাবনের ব্যবহার করছে।

এ প্রেক্ষাপটে আগামী শুক্রবার (১৭ মে) বাংলাদেশেও পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস। ২০০৫ সাল থেকে এ দিনটি পালন করে আসছে জাতিসংঘ। এবারের টেলিযোগাযোগ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই উন্নয়নে ডিজিটাল উদ্ভাবনের ব্যবহার’।

মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর দাঁড়িয়ে মোবাইল আর্থিক সেবার বিস্তার ঘটলেও নগদের উদ্ভাবন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে। দেশে প্রথম ইলেক্ট্রনিক ইকেওয়াইসির প্রবর্তন করা, মোবাইলে একটা শর্টকোড (*১৬৭#) ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার মতো সেবার সহজিকরণ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়িয়েছে।

২০১৯ সালে নগদ যখন যাত্রা শুরু করে তখনও মোবাইল ব্যাংকিং বা যেকোনো অ্যাকাউন্ট খোলাটা দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার ছিল। কয়েক পাতার ফরম পূরণ করে ৭ থেকে ১০ দিন ধরে ফাইল চালাচালির পর একটি অ্যাকাউন্ট খোলা যেত। নগদ এখানে স্মার্টফোনের জন্য ই-কেওয়াইসি ব্যবস্থা নিয়ে এলো। যাতে সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে পরিচয় যাচাই করে সেকেন্ডে অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব।

এভাবে অবশ্য বিপ্লবটা হলো না। কারণ দেশের শতকরা ৬০ শতাংশের বেশি মোবাইল ব্যবহারকারী তখনও ফিচার ফোন বা বাটন ফোন ব্যবহার করে। তখন নগদ অভিনব এক আইডিয়া নিয়ে এলো, তারা মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি করল। যেহেতু মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে প্রতিটি নম্বরের বিপরীতে পরিচয়পত্র ডাটাবেজে রক্ষিত আছে, তাই সেই ডাটাবেজ ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খোলার উপায় আবিষ্কার হলো। *১৬৭# ডায়াল করলেই মোবাইল অপারেটরের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে কয়েক সেকেন্ডে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলা সম্ভব হলো।

‘টেকসই উন্নয়নে ডিজিটাল উদ্ভাবনের ব্যবহার’ এ প্রতিপাদ্যে নগদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুক বলছেন, আর্থিক খাতে যে টেলিকমিউনিকেশনকে বৈপ্লবিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব, সেটা নগদ দেখিয়েছে। আমরা শুরু থেকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন তথা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সে কাজে আমরা ডিজিটাল উদ্ভাবনকেই ব্যবহার করছি।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে টেলিকমিউনিকেশনের অভিনব ও অসামান্য ব্যবহার উদ্ভাবনের জন্য নগদ একটা কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে। এজন্যই কেবল বিশ্ব টেলিকমিউনিকেশন ও তথ্য দিবসে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি নাম হতে পারে নগদ। কিন্তু এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্যের সঙ্গে নগদের কাজ মিলে যাচ্ছে আরও অনেক বেশি।

এসডিজির এক নম্বর লক্ষ্যে বলা হয়েছে সব ধরনের দারিদ্রের অবসানের কথা। নগদ যে প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করছে, সেটা মূলত এ দারিদ্র অবসানের জন্যই। তারা বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নানা ধরনের ভাতা বিতরণ করে আসছে। বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী শিশু ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণ করছে।

এ ভাতা বিতরণকে নগদ কেবল সহজ করেনি। এ কাজ করতে গিয়ে সাড়ে ৯ কোটি গ্রাহকের এক পরিবার গড়ে তুলেছে তারা। যার ফলে এসডিজির দ্বিতীয় লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তাতেও ভূমিকা রাখতে পেরেছে নগদ। যে-সব প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ একসময় মঙ্গাসহ নানা দারিদ্র্যে ভুগতো, সেখানে নগদ-এর মাধ্যমে সরকারের ভাতা পৌঁছে গেছে এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত করতে পেরেছে।

এসডিজির তৃতীয় ও চতুর্থ লক্ষ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যতেও নগদ একইভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে। বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে নগদ-এর যে অবদান, তা অবশ্যই স্মরণযোগ্য। দেশের কয়েক লাখ শিশুর অভিভাবকের কাছে শিক্ষাবৃত্তি প্রায় বিনা খরচে পৌঁছে দিচ্ছে নগদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিশু ঝরে পড়ার হার ঈর্ষণীয়ভাবে এ কারণ কমে গেছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় বলা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি, মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী শিক্ষা ভাতা এবং প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিলের টাকা বিতরণ হচ্ছে নগদের মাধ্যমে।

নগদ কাজ করছে লৈঙ্গিক সমতা নিয়েও। বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা সেইসব নারীর ক্ষমতায়ন করেছে, যারা এর আগে সমাজের মূলস্রোতে সেভাবে আসারই সুযোগ পেতেন না। এসডিজির পঞ্চম লক্ষ্য এ লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করা। এছাড়া সরকারের নীতির কারণেই শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা বাবার বদলে মায়ের নগদ নম্বরে পাঠানো হয়। এ অর্থ সন্তানের জন্য খরচ করার স্বাধীনতা দিয়ে এলে কয়েক লাখ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে নগদ।

সবার জন্য কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে এসডিজির ৮ নম্বর লক্ষ্যে। নগদ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই প্রায় আড়াই লাখ উদ্যোক্তাসহ অন্তত ৩ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান করেছে। এছাড়া নগদ-এর সঙ্গে কাজ করা এসব উদ্যোক্তার মাধ্যমে আরও কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।এ কাজগুলো করতে গিয়েই সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে নগদ। নগদের কর্মকাণ্ড একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে নিয়ে এসেছে। ফলে এসডিজির ১০ নম্বর লক্ষ্য অনুযায়ী অসমতা কমানোর জন্য কাজ করে যেতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি।

নগদ শুরু থেকেই তার প্রধান শক্তি হিসেবে সামনে এনেছে উদ্ভাবন ও বিকল্প ভোগের ব্যাপারকে। তারা মনে করে ট্রেডিশনাল পণ্য ভোগের থেকে সরে এসে ডিজিটাল কেনাকাটার সময় এসেছে। আর এটাই এসডিজির ১২ নম্বর লক্ষ্য। তারাও চায় কাগজের মতো ট্রেডিশনাল উপকরণ ব্যবহার কমিয়ে আনতে, যা পরিবেশকে রক্ষা করবে। নগদ-এর মতে ক্যাশলেস সোসাইটিই পারে এ লক্ষ্য অর্জন করতে।

এসডিজির ১৬ নম্বর ধারা বলছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের কথা। কয়েক বছর আগের কথা চিন্তা করলেও এ দেশের কোটি কোটি মানুষ আর্থিক কর্মকাণ্ডের বাইরে ছিল। এখনও লাখ লাখ মানুষ সব ধরনের ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের বাইরে আছেন। আর এ মানুষগুলোকেই মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় নগদ। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংক এ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও বিস্তৃত করবে বলে তারা আশা করেন।