জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বাবা-মায়ের বুকে ফিরলেন নাবিক নাজমুল

প্রকাশিত: ৫:২২ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,সিরাজগঞ্জঃ 

‘জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ভেবেছিলাম মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজনদের মুখ আর কোনদিন দেখা হবে না। তখন নামাজ পড়তাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, হে আল্লাহ তুমি আমাদের বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও। এভাবেই মৃত্যুর দুয়ারে বসে রাত-দিন কাটাতে হয়েছে।’ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বুধবার (১৫ মে) সকালে কথাগুলো বলছিলেন এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চরনূরনগর গ্রামের নাজমুল হক হানিফ।

এ সময় নাজমুল বলেন, এরপর ১৩ এপ্রিল ভোরে মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুদের হাত থেকে আমাদের মুক্তি মেলে। আল্লাহ আমাদের ডাক শুনেছেন। তবে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে গেলে মৃত্যুর ভয় কাটলেও তৎক্ষণিক মায়ের কোলে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। তাই মুক্তির পর থেকে শুরু হয় মা-বাবার বুকে ফেরার অপেক্ষা। আজ মা-বাবা আমাকে বুকে ফিরে পেয়ে দারুণ খুশি। বারবার কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহর দরবারে।

নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে নাজমুলকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আবু সামা ও নার্গিস খাতুন দম্পত্তি। মা-বাবাকে বুকে টেনে নিয়ে নাজমুল আদর-ভালোবাসা ও আবেগে জড়িয়ে থাকেন অনেকক্ষণ। ছেলেকে কাছে পাওয়ার স্বস্তি রূপ নেয় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। ছেলের দুই গালে ভালোবাসার চুমুতে ভরিয়ে দেন তারা। এক পর্যায়ে আত্মীয়স্বজনসহ নাজমুলের গ্রামের মানুষেরা ভিড় করে বাড়িতে। পরিচিত মানুষদের কাছে পাওয়ায় খুশির দৃশ্য যেন ছড়িয়ে পড়ে। আত্মীয় স্বজন এবং গ্রামবাসী তাকে বরণ করে নেয়। তার ফেরার মধ্য দিয়ে স্বজন-পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে।

নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বুকের ধন বুকে ফিরলে কী যে আনন্দ হয় তা বলে বোঝানো যাবে না।ছেলেকে বুকে নিয়ে মা নার্গিস খাতুন বলেন, দিন-রাত ছেলের ছবি নিয়ে মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কি না এই চিন্তায় বসে থেকেছি। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছিল না।

তিনি বলেন, নাজমুল অপহৃতের পর থেকেই ওর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আজ ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। এবার ঈদের দিন কীভাবে যে কেটেছে বলতে পারব না। ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছে, আমি ঈদের সকল কিছু আজ রান্না করব। ছেলেকে নিয়ে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করব।

মা-বাবার পাশে দাঁড়িয়ে নাজমুল হক বলেন, জিম্মিকালে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যুর আতঙ্কে। বন্দুক হাতে টহল দিত জলদস্যুরা। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। আজ এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা ছিল না আমার। মা-বাবাকে কাছে পাব, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে। এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহসহ জাহাজেরর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি জাহাজের ক্রু হিসেবে ছিলেন সিরাজগঞ্জের নাজমুল হক। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে নাজমুলের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন মা-বাবা-বোনসহ স্বজনেরা।

এরপর গত (১৪ এপ্রিল) ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনা পাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৫ দিন পর মুক্ত নাবিকরা বাংলাদেশে এসে স্বজনদের কাছে ফিরলেন।