
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে চায়না থ্রি গর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে পড়ছেন মো. কামরুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট থেকে চীনা ভাষা শিখেছেন, পরে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত চীনা কোম্পানি জুরুই ইন্ডাস্ট্রিতে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। চীনা ভাষা শেখার ও এই ভাষা শিখে কাজের নানা সুযোগের কথা জানাচ্ছেন তিনি।
এখনকার সময়ে চীনা ভাষা শেখাটা বেশ বুদ্ধিমানের কাজ। ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ প্রকল্পের আওতায় চীন বিশ্বব্যাপী নানান দেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। এতে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শেখার গুরুত্ব বেড়েছে। চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা ও চাকরির বিপুল সুযোগ সৃষ্টি করছে। চীনা সরকারি বৃত্তির সুযোগ তো আছেই, পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই চীনা ভাষা এখন বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাংলাদেশে কাজের সুযোগ
বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, এমনকি আফ্রিকার অনেক চীনা কোম্পানি প্রায়ই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। চীনা ভাষা জানেন, এমন কর্মী নিতে আগ্রহ দেখায়। চীনা ভাষা জানলে চাকরির সুযোগ বেশি, অথচ চীনা ভাষা জানেন, চীনের বাইরে এমন লোকের সংখ্যা কম। বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন চীনা কোম্পানিতে অভিজ্ঞতা ছাড়াই দোভাষী পদে চাকরি করা সম্ভব, যেখানে মাসিক বেতন সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই বেতন এক থেকে দুই লাখ টাকাও হতে পারে। আবার চাকরির একটি পর্যায়ে ম্যানেজমেন্ট স্তরে পদোন্নতি পাওয়া যায়। ফলে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বেড়ে যায় বহুগুণ।
চীনের কারখানা, বাজার বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের সময় চীনা ভাষার জ্ঞান অপরিহার্য। সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনেও চীনা ভাষা শেখার গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে চীনা ভাষায় শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে চীনে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সেই সব চীনা শিক্ষার্থীরা, যাঁদের মেজর (মূল বিষয়) বাংলা ভাষা। এতে করে দুই দেশের মধ্যে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। অনেক সময় দুই দেশের কূটনৈতিক ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা দোভাষী হিসেবেও কাজ করেন।
দেশে চীনা ভাষা শেখার সুযোগ
বাংলাদেশে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার অন্যতম কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট। বর্তমানে এই ইনস্টিটিউট বা ‘কনফুসিয়াস ক্লাসরুম’ চালু আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চালুর প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে চীনা ভাষাশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে, যা চীনা ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য সুযোগ। এ ছাড়া চীন থেকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেছেন, যেখানে ৬ মাস থেকে ১ বছর মেয়াদে অনলাইন ও অফলাইন কোর্স করা যায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো—কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে চীনা শিক্ষকেরা সরাসরি ইংরেজি ভাষায় পাঠদান করেন, ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক উচ্চারণসহ চীনা ভাষা দ্রুত শিখতে পারেন।
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, ভাষা শেখার পাশাপাশি সংস্কৃতির চর্চাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভাষা শেখার অভিজ্ঞতাকে পূর্ণতা দেয় এবং শিক্ষার্থীদের চীনা সমাজ ও জীবনধারা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।
জেনে রাখা ভালো
এটা ঠিক যে চীনা ভাষা শিখলে অনেক সুযোগের দরজা খুলে যায়। তবে এই ভাষা শেখার চ্যালেঞ্জগুলো না জেনে সিদ্ধান্ত নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। হয়তো কিছুদিন শেখার পর আপনি হাল ছেড়ে দিতে পারেন। চীনা ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ভাষাগুলোর মধ্যে একটা। তাই মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকা দরকার—এখানে আপনাকে অনেক সময় ও মেধা বিনিয়োগ করতে হবে। চীনা ভাষা ঠিকঠাক আয়ত্ত করতে সাধারণত এক থেকে দুই বছর লেগে যায়। তবে আপনি যদি পরিশ্রম করতে পারেন, তবে এক বছরেও শিখে ফেলতে পারবেন। লেভেল ৩ শুরু করার পর ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তখন ধৈর্য ও পরিশ্রম—দুটিই বাড়িয়ে দিতে হয়। মনে রাখবেন, কষ্ট করলেই কেষ্ট মিলবে।