ক্রমে বিষাক্ত হয়ে উঠছে করতোয়া নদীর পানি

অর্থদণ্ডেও কমছে না নদীতে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা

প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০

অর্থদণ্ড করেও বাগে আনা যাচ্ছেনা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সুতা প্রসেস মিল মালিকদের। ফলে প্রতিনিয়ত দূষণের শিকার হচ্ছে শাহজাদপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর পানি। ক্রমে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে এ নদী। হারিয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির নানা প্রকার মাছ।

 

অতীতে নদীপাড়ের হাজারো মানুষের চাহিদা মেটানো হত এ নদীর পানি দিয়ে। ফসলি জমিতে সেচও দেয়া হত। প্রায় বিনা খরচায় চাষিরা সেচ সুবিধা পেতেন। তা এখন সবই অতীত।

এ বিষয়ে করতোয়া নদীপাড়ের দরগাপাড়ার মজনু মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, শুধু গোসল নয় রান্নাসহ সব কাজেই এক সময় করতোয়ার পানি কাজে লাগানো হত। এখন গোসল করতেও ভয় লাগে।

 

তিনি আরো জানান, করতোয়া নদীর পানি ব্যবহার কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে গেছে । ফলে শাহজাদপুরের সবখানেই পানির স্তর অনেকে নেমে গেছে। চৈত্র মাসে টিউওয়েলে পানি না উঠায় সাবমার্সেবল পাম্প বসানোর হিড়িক পড়ে গেছে। এছাড়া নদী খননের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় শুস্ক মৌসুমে করতোয়ার অনেক স্থানেই হাঁটু পানিতে এসে দাঁড়ায়।

 

শাহজাদপুরে এখন হস্তচালিত তাঁতের জায়গায় পাওয়ার লুম স্থান করে নিয়েছে। তাই বস্ত্রের উৎপাদন সক্ষমতাও অনেক গুন বেড়ে গেছে। এখন শাহজাদপুরে পাওয়ার লুমের জয়জয়াকার। এ কারণে সূতা প্রসেসিং ও ডাইং কারখানাও এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। এ সকল কারখানার বর্জ্য নিয়মিতভাবে পাইপ দিয়ে করতোয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকদের মাসোহারা দিয়ে প্রসেজ মিলের মালিকরা দিব্যি কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও সে অভিযান কোন কাজেই লাগছে না।

 

এদিকে পানি দূষণের কারণে করতোয়া নদীর নানা প্রকার দেশী প্রজাতির মাছ প্রায় শূন্য হওয়ার পথে। এ নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য করতোয়া নদীর একাধিক জায়গাতে অভয়াশ্রম স্থাপন করা হলেও মৎস্য বিভাগ এখন আর সে উদ্যোগ নিচ্ছেনা। ফলে করতোয়া নদী এখন মাছ শূন্যের দিকে।

এ নিয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, যারা প্রসেজ মিল ও ডাইং ফ্যাক্টরি নিয়েছেন তাদের পানি শোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন প্রসেজ মিল মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।