কোম্পানি তালিকাভুক্তির আইনে সমস্যা আছে: ডিএসই চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

সেলিনা আক্তারঃ

কোম্পানির আইপিও তালিকাভুক্ত করার আইনে কিছু সমস্যা আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। এজন্য আইন সংস্কার করার কথা বলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের কমিটি ডিএসইর সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, কোম্পানির আইপিও তালিকাভুক্ত করার আইনে কিছু সমস্যা আছে যেগুলো সংস্কার করতে হবে। তবে সংস্কার করতে গিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয় আপনারা এমন কিছু করবেন না। আমি সব সময় বলে আসছি, সামনেও বলব যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের উল্লেখযোগ্য ব্যবধান না করা গেলে ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করা যাবে না। আর শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয় বাংলাদেশে যেসব গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে সেগুলোও তালিকাভুক্তিতে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি তথা ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে কথা বলতে হবে। নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাজার উন্নয়নে যদি ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ডিবিএ একসাথে কাজ করে তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে।

বাবু বলেন, পুঁজিবাজারের অন্যতম স্টেকহোল্ডার হলো মার্চেন্ট ব্যাংক৷ শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়নে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানো, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় এবং বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানো মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অন্যতম প্রধান কাজ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, বাজারে অর্থের জোগান কম ছিল।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার উন্নয়নের সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার নির্দেশ দিয়েছেন যা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যা এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ ও সাহস জোগাচ্ছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর সুদূর প্রসারী দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, একটি উন্নত দেশের পুঁজিবাজার সে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যান্য দেশে দেখা যায় সে দেশের মানি মার্কেট যতটা সাপোর্ট দেয় পুঁজিবাজারও ততটুকুও সাপোর্ট দেয়। আমরা সব সময় বলে আসছি যে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ না করলে পুঁজিবাজার সাসটেইনেবল হবে না‌। এখানে দুই তিন বছরের জন্য আসলেই বাজার ভালো হবে না। আপনারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কথা বলেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু বলে থাকেন বাজারে উত্থান পতন থাকবে। কিন্তু আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখানে এসে পরের দিনই লাভ তুলতে চান। আর এ কারণেই বড় পতন হয়। সে জায়গাতে আপনাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা চাই আপনারা এ জায়গায় কাজ করবেন।

ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, আপনারা যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন সে বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বিষয়গুলো আরও আগে তুলে ধরলে আরও বেশি ভাল হতো। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আমরা বিগত ২৫ বছর ধরে এ কাজটি করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, আমরা গত ৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে একটি চিঠি দিয়ে সরকারি কোম্পানিগুলোর সাথে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করতে চেয়েছি, যেন তারা সহজে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে। এর কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী এই যুগান্তকারী নির্দেশনাটি দিয়েছেন। আশা করছি আগামী জুন মাসের মধ্যে আমরা সচেতনতামূলক কর্মসূচি করতে পারবো। আর এই বিষয়ে আপনাদের আমরা সহযোগী হিসেবে চাই।

এর আগে বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুন ও অন্যরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই চিন্তা করছেন কীভাবে মার্কেটের উন্নয়ন করা যায়। এতে আমরা মার্চেন্ট ব্যাংকার্সরা উৎসাহিত হয়েছি। আমাদের মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসুক। কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো অনেক বড় কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো মার্কেটে আসলে মার্কেটের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে, যা আমরা দেখতে পারবো। যে জটিলতায় হোক বা যে কারণেই হোক বিষয়টি এতদিন আটকে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাটা যেহেতু চলে এসেছে, আশা করছি এই বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব শিগগির কাজ শুরু করতে পারবো।

বিএমবিএ’র পক্ষ থেকে বাজার উন্নয়নে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে দ্বৈত কর, গুণগত মানসম্পন্ন আইপিও আনা, আইপিও প্রাইসিং সিস্টেম, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, মার্জার একুইজেশন, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা, ঘন ঘন আইন-কানুন পরিবর্তন না করা, কাট-অফ মূল্যের অধিক মূল্যে বিডকারীদের প্রোরাটার ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ প্রদান, আইপিওর কোটা ও লক-ইন সময়ের কিছু সংশোধনী আনা, সিকিউরিটিজ ভ্যালুয়েশনের ক্ষেত্রে মার্কেট অ্যাপ্রোচ ও ইনকাম অ্যাপ্রোচ মেথড অনুসরণ করা, বিডিংয়ের সম্মতি পাওয়ার পরই রোড-শোর আয়োজন করা, মার্জিন ঋণের আইনে কিছু পরিবর্তন আনা, গবেষণায় জোর দেওয়া।